সরকার শ্রমজীবী ও প্রান্তিক মানুষের সুবিধায় ব্যাপকভাবে চাল ও আটা খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য বাজেট বরাদ্দের বাইরে ৩ লাখ টন চাল ও এক লাখ টন গমের বাড়তি বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূলত ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ ও মূল্যস্ফীতির কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশব্যাপী ডিলারদের দোকান ও খোলা ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি করে চাল ও আটা কিনতে পারে। গত সাড়ে ৬ মাসে বাজারের তুলনায় কম দামে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ টন চাল ও আটা সরবরাহ করা হলেও বাজারে পণ্যের দাম কমেনি জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
চলতি অর্থবছরে ওএমএস কার্যক্রমের জন্য বাজেটে এক লাখ ৭০ হাজার টন চাল এবং ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় শ্রমজীবী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওএমএসের চাল ও আটার চাহিদা বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা করতে কম দামে বিক্রির ওই কার্যক্রম বাড়াতে সম্প্রতি বাড়তি বরাদ্দ চেয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়। পাশাপাশি চালের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য বেসরকারি খাতে কম খরচে আমদানির সুযোগ সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়তে থাকায় ওই উদ্যোগ নেয়া হয়। সেজন্য চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর চালের দাম বাড়তে থাকলে সরকার নিজে ও বেসরকারি খাতে আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওই সময় চালের আমদানি শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে সরকার ২৫ শতাংশ করেছিল। তারপর খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কয়েকশ ব্যবসায়ীকে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী অনুমোদন নিলেও আমদানি করেননি। মাত্র ৩ লাখ ৩১ হাজার টন চাল দেশে আমদানি হয়েছে। কারণ ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানির পর পাইকারি বাজারে যে দাম তাতে ব্যবসায়ীদের পোষায়নি।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ২৮ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিতরণের লক্ষ্য সরকারের রয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকার ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩০ টন খাদ্যশস্য বিতরণ করেছে। তার মধ্যে ১২ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৯ টন চাল আর বাকিটা আটা বা গম। চালের মধ্যে ন্যায্যমূল্যের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪১৮ টন সরবরাহ হয়েছে। ওএমএসের মাধ্যমে সরবরাহ হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪৭ টন। এসেনশিয়াল প্রায়োরিটিজের (ইপি) মাধ্যমে এক লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টন, কাবিখার মাধ্যমে ২০ হাজার ৩৮৪ টন, ভিজিএফের মাধ্যমে এক লাখ ২১ হাজার ৮৭ টন, ভিজিডির মাধ্যমে এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৫১ টন ও জিআরের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৪১৭ টন চাল সরবরাহ করেছে সরকার। বাকি চাল ওপি, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ বিভিন্নভাবে সরবরাহ করা হয়েছে।
ওএমএসের জন্য যে বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল তার অনুমোদন পাওয়া গেছে। ফলে নতুন করে ওএমএস কার্যক্রম চালু করা হবে। আর আমনের মৌসুমেও চিকন চালের দাম বাড়ছে। এরকম অবস্থায় ভবিষ্যতে যাতে দাম আর না বাড়ে সেজন্য ফের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এ বিষয়ে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানম নিশ্চিত করেন।