যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন শাসনভার নিতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। এরই মধ্যে পছন্দের লোকদের নিয়ে নতুন প্রশাসন সাজানোর পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে বিশ্বরাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশ্বনেতারা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফিরে আসা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। গুঞ্জন উঠেছে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের নানা বাধার সম্মুখীন হতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কারণ, আগেরবার ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বন্ধু হিলারি ক্লিনটন হেরে যাওয়ার তিনি হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। আবার এবার তিনি সরকাপ্রধান হওয়ার পর বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় টাকা ঢালার অভিযোগ উঠেছিল। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন গ্রামীণ আমেরিকা ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ১ লাখ থেকে ২ দশমিক ৫ লাখ ডলার এবং গ্রামীণ রিসার্চ ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার দান করেছিল।
ট্রাম্পের বিজয়ের পর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের জয় আমাদের এতটাই আঘাত করেছে যে, এই সকালে আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি আসলে হতাশায় ডুবে গিয়েছিলাম। এর জন্যই কি আমেরিকা এসেছিলাম? আমরা একদিন এই অন্ধকার মেঘ কাটিয়ে উঠতে পারব।’
জয়ের পর ট্রাম্পও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতার সূত্রে একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছে। তাতে দাবি করা হয়, বিজয়ের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। তখন ট্রাম্প তাঁদের বলেন, ‘ঢাকার ক্ষুদ্রঋণের লোকটি কোথায়? শুনেছি আমার হারের জন্য টাকা ঢেলেছেন তিনি।’ (Where is the micro-finance guy from Dhaka... I heard he donated to see me lose.) এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশি প্রতিনিধিরা বিস্মিত হন বলে জানা যায়।
ইউনূসের ট্রাম্প-বিরোধী বক্তব্য এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্য নিন্দা ইউনূসের জন্য ওয়াশিংটনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বেড়েছে, যা ইউনূস রাজনৈতিক ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘আমার সময়ে এটি ঘটত না।’ তিনি আমেরিকা ও বিশ্বব্যাপী হিন্দুদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংসতা ও লুটপাটের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কমলা ও বাইডেন হিন্দুদের ব্যাপারে নির্বিকার থেকেছেন, কিন্তু আমরা আবার শক্তিশালী আমেরিকা গড়ব ও শান্তি ফিরিয়ে আনব।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর হামলা সম্ভবত ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বন্ধ হবে। একটি সূত্রের দাবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চর্চার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা সহজ হবে না।
এদিকে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য একটি আর্থিক অনুদান চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ও নির্বাচনের আগে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। এতে বিএনপি ক্ষুব্ধ হয়েছিল, কারণ দলটি দ্রুত নির্বাচন চায়। এখন সেই আর্থিক অনুদান বাংলাদেশ পায় কিনা সেটি দেখার বিষয়। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে ভবিষ্যতে সহযোগিতার আশা প্রকাশ করেছেন।