ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ঢাবিতে মেয়েদের হেনস্থা, ওয়াশরুম ও হলে পুরুষ প্রবেশে তীব্র ক্ষোভ

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, নভেম্বর ৬, ২০২৪

ঢাবিতে মেয়েদের হেনস্থা, ওয়াশরুম ও হলে পুরুষ প্রবেশে তীব্র ক্ষোভ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসমাবেশে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, তাদের হেনস্থা. নারীদের ওয়াশরুম ব্যবহার এমনকি মেয়েদের হলে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে বহিরাগত পুরুষদের বিরুদ্ধে। ছাত্রীরা অনেকে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেকে ফেসবুকে তুলে ধরেছেন তাদের হেনস্থার কথা। প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্ররাও। এমন পরিস্থিতির জন্য ঢাবি উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসনকে দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৪ নভেম্বর) রাত থেকেই মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন ইসলামি মহাসমাবেশে আসা আলেম ওলামাসহ মুসল্লিরা। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসমাবেশে আসা আলেম ওলামাসহ মুসল্লিরা অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। পরে অনেকে কলা ভবন মেয়েদের ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। ক্যাম্পাসে মেয়েদের পোশাক নিয়ে নানা আপত্তিকর কথা বলেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। রোকেয়া হলের ভেতরে প্রবেশের অভিযোগ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেয়েরা।

দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়েছেন সমাবেশে আসা লোকজন। ক্যাম্পাসের ছেলেদের হল, প্রশাসনিক ভবনসহ সব জায়গার ওয়াশরুম ব্যবহার করছেন তারা। কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিলনা ঢাবি প্রশাসনের।

নারী শিক্ষার্থীদের ‘আজে বাজে’ কথা বলে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগও উঠেছে সমাবেশে আসা লোকজনদের বিরুদ্ধে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের এক নারী শিক্ষার্থী প্রক্টরের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসে বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় কেন্দ্রীয় প্রন্থাগারের সামনে আমাকে আজেবাজে কথা বলা হয়। আমার ক্যাম্পাসে আমিই নিরাপদ নয়।’

শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সালেহীনের ফেসবুক পোস্টে একাধিক নারী শিক্ষার্থীর কমেন্টে নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একটি কমেন্টে এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘গায়ে ওড়না কোথায়?’ ‘মেয়েরা এখানে কী করে’ এ রকম বাক্যসহ কটূক্তি করা হচ্ছে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কী বললেন, তখন উত্তর দেন, ‘আপনাকে বলি নাই।’ একাডেমিক ভবনে ঢুকে ফিমেল ওয়াশরুমে পর্যন্ত ঢুকে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। একজন মেয়েকে অলরেডি ব্যাড টাচ করা হয়েছে।’

আরেকটি ফেসবুক পোস্টে আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আজকের এই প্রোগ্রামে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ২ হলের মেয়েরা। কাল রাত থেকে এত সাউন্ড আজকেও হইতেছে। আপনারা প্রোগ্রাম করেন ভালো কথা, শামসুন্নাহার হলের সামনে কি আপনাদের গাড়ি পার্কিং করার জায়গা? মিশুক মনির চত্বরে সব পুরুষ বসে আছে। কলাভবন থেকে যে হলে ফিরব, এই জায়গাটুকু রাখে নাই।’

ঢাবি শিক্ষার্থী মুনমুন মাহজাবিন লিখেছেন, ‘তৌহিদি হুজুররা ডিপার্টমেন্টের ফিমেল ওয়াশরুমে চলে যাচ্ছে, মেয়েদের "ওড়না কই" বলে হ্যারাস করছে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করছে। পিও শিক্ষার্থী সংসদে এসব নিয়ে পোস্ট দিলে তারা ‘আমুলীগ আর শাহবাগী’ ট্যাগ দিচ্ছে। কথায় কথায় খালি ‘ফাস তারিকের আগে আমুলীগের সম্মেলনের সুমায় কুতায় ছিলেন?’ বলে চিৎকার করে উঠছেন। গ্রুপের নাম বদল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৌহিদি সংসদ রেখে দেন না হয়। ভালো কথা, শিক্ষার্থী সংসদের সেই প্যাট্রোল ডিজেল বাহিনী কুতায় একন?

আরেক ছাত্রী লিখেছেন, ‘আমি বোরকা পরিহিত ছিলাম। আমার সাথেই একটা মেয়ে হিজাব পড়া ছিল। ক্লাস শেষে ক্যাম্পাস দিয়ে হাটার সময় আমাকে হুজুররা বলছেন, " আপনারা এখানে আসছেন কেন, হ্যাঁ? আপনারা এখানে কেন?’

রেহান উদ্দিন লিখেছেন, ‘ হুজুররা মূত্র বিসর্জন দিল কোনো? আরে মিয়া লাফালাফি কম করেন। আজকের কথা বাদ দিয়ে বলেন আমাদের ঢাবিতে টয়লেট আছে? রিকশাওয়ালারা, বহিরাগত, টোকাই পোলাপানরা যখন ক্যম্পাসে রাতে প্রসাব পায়খানা করে তখন কই থাকে চোখ? আর এগুলো নজরে আসলেও কুকুরের দোষ দিয়ে চালাইয়া দেন। বলেন এগুলো কুকুর করছে। এরা অনেক নোংরা করেছে ঢাবির ক্যাম্পাস। টিএসসি শহীদ মিনারের আশেপাশে ২/১ টয়লেট করে এদের ওইখানে যেতে বাধ্য করলে ক্যাম্পাসটা নোংরা মুক্ত থাকতো। প্রসাশনকেও এই ব্যাপারে অবগত করা দরকার।’

আবিদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামটা বাদ দিয়ে খোলা বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করলেই তো হয়! যেখানে ইচ্ছা মূত্র ত্যাগ,রাসস্তায় খাবারের প্যাকেট, সকল জেলার বাস দিয়ে ক্যাম্পাস ভর্তি, ভিড়ের ঠ্যালায় ধাক্কাধাক্কি,অনেক মেয়েদের পোশাক নিয়ে নানান মন্তব্য- পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ওপেনলি এরকম হয় কি না, গুগল তন্নতন্ন করে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না, ভিসি স্যার আপাতত ঘুমে আছেন, বিশ্বের ১ নম্বর তালিকায় ভারসিটির নাম উঠলে মনে হয় উনি জাগবেন ।।। সে পর্যন্ত না হয় আমরাও সহ্য করতে করতে ঘুমিয়ে যাই...।’

শিক্ষার্থী তাসনিয়া তাহসীন লিখেছেন, ‘হলের সামনে মুত্রবিসর্জন জায়েজ হয়ে গেছে? নাকি মেয়েদের বাজে কমেন্ট করা জায়েজ হয়ে গেছে? আওয়ামীলীগের টোকাইরা পরিবেশ নষ্ট করলেও বলা হতো এখন হুজুররা করলেও বলা হবে। আপনার কোথায় জ্বলতিসে ভাই? আমার সিনিয়র হ্যারাস হয়েছে, তার জাইগা আমি থাকতে পারতাম, সো সবাইতো ভাল হবে না বা ২/১ জন এমন থাকে মার্কা এক্সিউস দিবেন না, আমার সেফটির দায়ভার আপনি নিবেন? ইউনি বাস চলাচল করতে পারে নাই, এর জন্য পরিক্ষা ক্যানসেল হয়েছে, ভাই সমাধি সৌধেকে প্রস্রাব করে!!!!!

এদিকে ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রোগ্রামের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপিকে তারা তাদের লোকসংখ্যা গোপন করেছে। তারা ২০ হাজার বললেও এখন দেখা যাচ্ছে, তারা লাখেরও ওপরে। আমার কাছে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীর ফোন এসেছে। তারা নানাভাবে হ্যারাজের শিকার হচ্ছে। কিন্তু তাদের বের করে দেওয়ার মতো লোকবল আমাদের নেই। আমরা মাইকিং করতে বলেছি। শাহবাগ থানায় জানিয়েছি, প্রোগ্রাম শেষে যেন টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে কেউ না বের হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’