করোনা সংক্রমণ আবারো বেড়ে গেছে। এক দিনে ৬ হাজার ৬৭৬ জন নতুন রোগী সনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী সনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এত রোগী ও সনাক্তের হার দেখা গিয়েছিল গত বছরের মাঝামাঝি। গত ১৫ আগস্ট সনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৬৮৪ জন। আর ১৬ আগস্ট সনাক্তের হারে ছির ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সনাক্তের ক্রমবর্ধমান এ হার বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আতংকিত। সরকার জনগণকে সচেতন করতে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। টিকা দানের গতি বাড়াবার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বুস্টার ডোজ নেয়ার বয়স-সীমা ৬০ থেকে ৫০ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ১১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া সরকারি নির্দেশনার কোনোটাই মানতে দেখা যাচ্ছে না। সবাই মাস্ক তো পরছেনই না, দূরত্ব-বিধিও মানছেন না। টিকা সনদ নিয়ে হোটেল রেস্তোরায় খাওয়ার কথা থাকলেও সে সনদ কেউ দেখছেন না। বাস, ট্রেন, লঞ্চেও আসন সংখ্যার বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না বললেও তা কেউ মানছে না। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে বাসের হেল্পাররা উল্টো যাত্রীরা জোর করে উঠছে বলে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য এবং জনগণকে সচেতন করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবার কথা থাকলেও নাম মাত্র কিছু জরিমানা আদায়ের খবর ছাড়া কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বাজার, কাঁচাবাজারগুলোর অবস্থা আরো করুন। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নাই। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই মাস্ক ছাড়াই গাদাগাদি করে কেনা-বেচা করছেন। অথচ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস-গড়া এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার ব্যাপারে সরকার সবাইকে সাবধান করেছে।
শত বাধার বাণী উপেক্ষা করে; সংক্রমণের আতংক-ভুলে মানুষ সারা দেশে বেপরোয়া চলাচল করছে। ঢাকায় করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ দেখা গেলও সারা দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রনে মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকলেও ডেল্টা ভেরিয়েন্ট জীবন সংহারি। তাই দেশের ১১৮ টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন ২৫৯ টন অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা কতটা করুন হয়ে ওঠে, সে দৃশ্য সবাই দেখেছে। শুধু তাই নয়, অনেক পরিবারের সদস্যদের করোনার কারণে মৃত্যু মুখে পতিত হবার বিয়োগান্তক ঘটনাগুলোও ভুলে যাবার কথা নয়। কিন্তু তারপরও মানুষ কেন সচেতন হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দৈনিক নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের হার, হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার ও মৃত্যু বেড়ে গেলে অর্থনৈতিক সব বিবেচনা বাদ দিয়ে আবারো লকডাউন দেয়া ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প পথ থাকবে না। যদিও এখন পর্যন্ত লক ডাউন দেওয়ার কথা সরকার ভাবছে না। তবে প্রত্যেকের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সবাইকে সচেতন করতে চাইছে। আর যে জনগণের জন্য সচেতনতা প্রয়োজন, সেই জনগণ যদি সচেতন না হয় তবে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা ভাবা যায় না। তাই জীবন বাঁচাতে জীবন সাজাতে সংক্রমণ রুখতে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিকল্প নাই। মহামারীর এ চলমান চ্যালেঞ্জ আমাদেরই মোকাবেলা করতে হবে। বৈশ্বিক এ চ্যালেঞ্জে সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।