সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনশীল। এই জলবায়ু পরিবর্তন দুটি কারণে সূচিত হয়। মনে করা হয় এক মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে বরফ যুগ ও উষ্ণ যুগ অতিবাহিত হয়েছে। এটি ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাকৃতিক কারণ। কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রম। নগরায়ন, কন উজাড়, অধিক হারে কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদির ফলে নির্গত গ্রীনহাউজ গ্যাসের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের জন্য দায়ী চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
যারা মোট নির্গমনের প্রায় ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী। বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলোর উন্নত জীবনযাপনের ফলে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশ একটি। পাশাপাশি এদেশের মানুষের অসচেতনতা, অতিরিক্ত জনসংখ্যার বসতির জন্য বন উজার করে দেওয়া ইত্যাদির ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। একটি দেশের প্রেক্ষাপটে বনভূমির পরিমাণ থাকা দরকার ২৫ ভাগ। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশে বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর মধ্যে বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এছাড়া অতিরিক্ত কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তন করছে। এর ফলে ঋতু বৈচিত্র্যের এদেশে দেখা যাচ্ছে শীত ও গ্রীষ্মের আধিক্য। অসময়ে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টিপাত, অধিক খরা। একটি গবেষণায় দেখা যায়, দেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা ব্যাপক। যা খুবই চিন্তার বিষয়। গত ৫০ বছরে দিন ও রাতের উষ্ণতার পরিমাণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এর প্রভাবে দেখা দিচ্ছে খরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অসময়ে বৃষ্টিপাত অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার সৃষ্টি করছে। এতে দেশের কৃষিসহ, জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য যেমন হুমকি তেমনি অন্যান্য প্রাণীর অভিযোজনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক প্রাণী পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। তাই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর সুন্দর জীবনযাপনের জন্য এখনই কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া জুরুরি।
সর্বপরি আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই আমূল পরিবর্তন সাধন প্রায় অসম্ভব। আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে এই পৃথিবী হবে আমাদের জন্য নরকভূমি। তাই আমাদের সুন্দর পৃথিবীকে ও নিজেদের রক্ষার্থে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
লেখকঃ লিয়ন সরকার
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা