স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরে গত এক দশকে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে তা ঈর্ষনীয়। ৭১ এর ধ্বংস বিধ্বস্ত বাংলাদেশ ক্রমাগত অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বমানচিত্রে গৌরবান্বিত অবস্থান তৈরী করেছে। একই সময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী অনেক রাষ্ট্রকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আবার এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে অনেক রাষ্ট্র খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে সহস্র শতাব্দী। সূচনালগ্ন থেকেই এদেশ গড়ার চেয়ে ভেঙেছে ঢেড় বেশি। স্বার্থবাদিতা,দুর্নীতি প্রবণতা, লুটতরাজ, চাটুকারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এদেশের মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। আর এই প্রবৃত্তি চর্চার ফলেই বিশ্বমন্ডলে জাতি হিসেবে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়!
সাম্প্রতিক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামোর যে অবনতি তার কারণ হিসেবে বাঙালির ওই আদিম প্রবৃত্তির অবাধ প্রচলনকেই গণ্য করা যায়। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় উদ্বুদ্ধ সমসাময়িক রাজনৈতিক অরাজকতা, পোশাক শিল্পের অনিয়মতান্ত্রিকতা, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি,আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশের অদূরভবিষ্যতকে ব্যাপক অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত করেছে। দেশের এই সংকটময় অবস্থা সৃষ্টিতে আমাদের সম-কার্যসম্পাদনা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত অমাবস্যা নিরসনে আমরণ প্রচেষ্টায় ছাত্র জনতা যেমন সত্য ও সুন্দরের সূর্য উদিত করেছিল তেমন তেজস্ক্রিয় মনোভাবের অভাব আজ এই জাতির অধপতনের মূখ্য কারণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এটা চলমান থাকলেও পরিতাপের বিষয় এই যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জাতির ভাগ্য নির্ধারক তরুণ ছাত্র সমাজের অসচেতনতা, আত্মকেন্দ্রীক মনোভাব,সুস্থ রাজনৈতিক চর্চায় অনীহা, সর্বংসহা মনোভাবের অভাব বর্তমান উদ্বুদ্ধ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ীতার ঈঙ্গিত বহন করে। দেশের ছাত্র সমাজের বৃহৎ একটি অংশ আত্মচর্চায় বিমোহিত হয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে উদাসীন মনোভাব পোষণের মধ্য দিয়ে দেশের একটি ভঙ্গুর কাঠামো নির্মাণের দ্বারপ্রান্ত উন্মোচন করেছে।
আরেকটি অংশ যুগ যুগ ধরে আবহমান অসুস্থ রাজনৈতিক অনুশীলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আত্মকে বিনষ্ট করার পাশাপাশি নিজের অভ্যন্তরে লুকায়িত দেশ ও জাতির কল্যাণে যে মুক্ত বুদ্ধি উদিত হয়েছিলো তা চিরতরে ধ্বংস সাধন করে তাদের প্রতি দেশবাসির ভরসা নামক বৃক্ষকে সমূলে উৎক্ষেপণ করার উল্লাসে মেতে উঠেছে। তরুণ ছাত্র সমাজের এই দুর্বলতা ও সুস্থ রাজনৈতিক বিমুখতা বাংলাদেশকে একটি দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন করবে বলে উপলব্ধি করা যায়।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে পরিত্রাণের জন্য ছাত্রসমাজের অবশ্যই মেধা চর্চার পাশাপাশি সুস্থ রাজনৈতিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রয়াসে নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে। সর্বংসহা মনোভাব ধারণ করে দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে প্রায়োগিক গবেষণা ও মেধাবৃত্তির বিকাশের ক্ষেত্রে জ্ঞানলদ্ধ ব্যক্তিত্ব গড়া সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারের হস্তক্ষেপ একান্তই কাম্য। দেশের অশুভ শক্তির অবসানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করার মনোবল সৃষ্টিতে এগিয়ে যেতে হবে অনাবিল দুর্বার গতিতে। সংকীর্ণতা ও আত্মকেন্দ্রীক ভাবণা বর্জন করে একজন আত্মপ্রত্যয়ী ছাত্রই পারে দুর্নীতিমুক্ত, জনবান্ধব এবং সাম্য ভ্রাতৃত্বের সোনার বাংলা গড়তে।
জুবায়ের হাসান
প্রথম বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।