Can't found in the image content. এ সমাজ পরাজিতদের জন্য না | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

এ সমাজ পরাজিতদের জন্য না

কলাম ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩

এ সমাজ পরাজিতদের জন্য না
আত্নহত্যা। বেশ চিন্তদায়ক এবং জটিল বিষয়। বিশ্বজুড়ে একজন মানুষ থেকে শুরু করে পুরো সমাজের উপরই এর প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশও এ বলয়ের বাইরে নয়।

গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আরেকটি সমীক্ষায় জানা গেছে ২০২৩ এর প্রথম ৮ মাসেই দেশব্যাপী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। যেখানে কিনা গতবছর সংখ্যাটা ছিল মোটে ৫৮৫। ২০১৯ সালে এদেশে প্র‍তি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ৩.৭০।

ভেবে দেখেছেন যে সোনার ছেলে-মেয়েদের এ সময়ে কঠোরভাবে পরিশ্রম করে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার কথা, তারা নিজেদেরকে এমন মৃত্যু কুয়োয় ফেলে দিচ্ছে। একেই কী বলে জীবনের অবসান? নাকি তারা পাকিস্তানের ১৪ ডিসেম্বরের বাকি কাজটা সেরে ফেলছে। কারণ এই বয়সে তো সেইদিনগুলোতে ছেলে-মেয়েরা রাজপথে নেমেছে, লড়েছে রণক্ষেত্রে, পাড় হয়েছে পাহাড় সমান বাধা এমনকি পাড়ি দিয়েছে সমুদ্র। তবে আজ এমন হচ্ছে কেন? একেই কি বলে সভ্যতা?

আত্মহত্যার প্রতি ঝোঁক এদেশে এখন এক মরণ ব্যাধি। এক সমীক্ষা অনুসারে এদেশে বছরে ২৩,৮৬৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে যে কারণগুলো বিদ্যমান: আর্থিক কষ্ট, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাব, সামাজিক চাপ এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব। এগুলোই নাকি একজনকে ঠেলে দেয় হতাশার প্রান্তে। তাই সে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। হেরে যায় সে জীবনযুদ্ধে।

আত্মহত্যা বাংলাদেশে এক গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষভাবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে কিশোরী এবং বিবাহিত মহিলারা। ছাত্র, অবিবাহিত, অল্প বয়স্ক, এবং স্নাতক স্তরের শিক্ষার অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রতি উচ্চ মাত্রার প্রবণতা দেখা যায়। তবে গবেষণা বা শিক্ষা ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অবহেলিত। যদিও ইদানিং নতুন নতুন গবেষণা বেরিয়ে আসছে, তবুও এদেশে আত্মহত্যা এক অধ্যয়নযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা। কারণ বাংলাদেশে এক দশকে (২০১১-২০২০) কোনো দেশব্যাপী, দীর্ঘস্থায়ী এবং হস্তক্ষেপমূলক গবেষণাই করা হয়নি। করলেও তা কি জনসম্মুখে এসেছে?

শাস্ত্রে আছে জীব হত্যা মহাপাপ। আত্মহত্যাও তো এক ধরণের হত্যাই। এ জীবন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার জীবন। তাইতো প্রখ্যাত জাপানি সংগীতশিল্পী ইয়োকো ওনো বলেন, জীবনটা কোনো গোলাপের বিছানা না। 

মানুষ কেন আত্মহত্যা করে?

যখন কেউ তার জীবন শেষ করার চেষ্টা করে তখন মস্তিষ্কে বেশ কিছু প্রভাবক কাজ করে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকটি হচ্ছে নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিন। সেরোটোনিনের নিম্ন মাত্রা বিষণ্ন মেজাজের কারণ হতে পারে। আত্মহত্যার জন্য এ এক উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি। এতে করে মস্তিষ্কের মেজাজ নিয়ন্ত্রক বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র হলো প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। এর কাজ মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করা। মানুষের মাথায় যখন আত্মহত্যার ভূত চাপে তখন মস্তিষ্কের এই অংশটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে মানুষ আর যৌক্তিকভাবে চিন্তাই করে না যে সে করছেটা কী। আমাদের মস্তিষ্কের আবেগের কেন্দ্র হচ্ছে অ্যামিগডালা। এসময় তা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠে। এতে নেতিবাচক চিন্তাটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। মনে হয় এগুলোই জীবনের চরম সত্য। জীবন তখন দুঃসহ হয়ে উঠে। মনে হয় এখনই শেষ করে দিই সব জ্বালা-যন্ত্রণা। 

তবে এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে মানব মস্তিষ্ক অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতার অধিকারী। সঠিকভাবে থেরাপি বা চিকিৎসা পেলে স্নায়বিক পথ পরিবর্তিত হবে। এভাবে আত্মহত্যা রোধ করা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন খানিকটা বিজ্ঞানের সহায়তা।

এ দেশের সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার ও পারিবারিক বন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা যেমন একদিকে মনে বল জোগায় তেমনি কারো কারো ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করে। অনেকের কাছেই "পরিবার সমাজে মুখ দেখাবে কী করে?" এক চরম ভীতি। তরুণদের ভেতর এ ভীতি বেশি কাজ করে।

বেশকিছু সংগঠন এবং উদ্যোগ এদেশে আত্মহত্যা রুখতে কাজ করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: 'কান পেতে রই', 'আচল ফাউন্ডেশন', 'বিএপি', 'সিআরপি' এবং 'এনআইএমএইচ'। তারা হতাশাগ্রস্তদের জন্য হেল্পলাইন সেবা দিয়ে, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন করে এবং সরাসরি আত্মহত্যা প্রবণ লোকদের চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করছে।

আত্মহত্যা এক জটিল সমস্যা। এ এক গভীরতম ব্যক্তিগত সংগ্রাম। এ সমস্যা দূর করতে প্রয়োজন বোঝা, সহানুভূতি ও সামষ্টিক প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে যেসব বিষয় মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় সেগুলোকে বিবেচনায় আনতে হবে। এগুলো নিবারনের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে পদক্ষেপ ও পরিবর্তনই একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ।


রেফারেন্স:

১. Salam, S., Alonge, O., Islam, M., Hoque, D., & Arifeen, S. (2018). PW 1608 The burden of suicide in rural bangladesh: magnitude and risk factors. Injury Prevention, 24, A109 - A109. https://doi.org/10.1136/INJURYPREVENTION-2018-SAFETY.302.

২. Chowdhury, S., Mashreky, S., & Rahman, A. (2018). PA 20-4-2021 Suicide in bangladesh: unfolding the epidemiological burden from a nationwide survey. Injury Prevention, 24, A46 - A46. https://doi.org/10.1136/injuryprevention-2018-safety.123.

৩. Arafat, S., Hussain, F., Jakaria, K., Itu, Z., & Islam, M. (2021). Empirical studies on suicide in Bangladesh in a decade (2011-2020). GLOBAL PSYCHIATRY ARCHIVES. https://doi.org/10.52095/GP.2021.10692.

৪. Bangladesh Suicide Rate 2000-2023| MacroTrends https://www.macrotrends.net/countries/BGD/bangladesh/suicide-rate

৫. Nearly 600 students in Bangladesh committed suicide in 2022: Report - Anadolu Ajansı https://www.aa.com.tr/en/asia-pacific/nearly-600-students-in-bangladesh-committed-suicide-in-2022-report/2799845

৬. Study: Bangladesh saw 446 student suicides in 2022 - Dhaka Tribune https://www.dhakatribune.com/bangladesh/303677/study-bangladesh-saw-446-student-suicides-in-2022

৭. 361 students commit suicide from January till August in 2023 - New Age https://www.newagebd.net/article/211713/361-students-commit-suicide-from-january-till-august-in-2023

৮. Alarming rise in student suicides demands immediate intervention - Dhaka Tribune https://www.dhakatribune.com/bangladesh/310871/alarming-rise-in-student-suicides-demands

৯. A Look at the Latest Suicide Data and Change Over the Last Decade - KFF https://www.kff.org/mental-health/issue-brief/a-look-at-the-latest-suicide-data-and-change-over-the-last-decade/


লেখক- নাইমুর রহমান ইমন, ২য় বর্ষ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।