ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

শোকাবহ আগস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

লিয়ন সরকার, জবি প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, আগস্ট ১৫, ২০২৩

শোকাবহ আগস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
একটি পরাধীনতা জাতিকে মুক্তির স্বাদ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য দীর্ঘ ২৩ বছরে কারাবন্দি ছিলেন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার কর্ণধার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে ব্যক্তি আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন তাকে বেশিদিন স্বাধীন বাংলার প্রকৃতির স্বাদ নিতে দেয়নি অকৃতজ্ঞ জাতির কিছু দোসর। ১৯৭৫ ডালের ১৫ আগস্ট ভোরে ঢাকাস্থ ধানমন্ডির ৩২ এর বাড়িতে সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। শোকাবহ আগস্ট মাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফ্রিডমবাংলানিউজ এর জবি প্রতিবেদক মোঃ লিয়ন সরকার 

'কৃতি মানের মৃত্যু নাই'

শেখ মুজিবুর রহমান এমন একটি নাম যার সম্পর্কে লিখতে শুরু করলে হয়ত পৃথিবীর সকল কালি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু লেখা শেষ হবে না। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি জাতিকে যুগে যুগে অত্যাচার নিপীড়ন থেকে উদ্ধার করতে একজন দেবদূত পাঠান। বাঙ্গালি জাতির দেবদূত হয়ে আবির্ভাব হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। কে জানত টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারের জন্ম নেয়া সেই ছোট খোকা একদিন বাংলার নিপিড়ীত মানুষের দেবদূত হবে কে ই বা ভেবেছিল। 
৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের এই সফরে প্রতিটি পদে পদে তার অবদান।  বাঙ্গালী জাতিকে সুদীর্ঘ দাসত্ব থেকে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু। কিন্তু ইতিহাসে বার বার বাঙ্গালী বিশ্বাস ঘাতকতার প্রমান যেমন দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বেলাও তার কমতি ছিল না।  বাঙ্গালী ইতিহাসের সেরা অকৃতজ্ঞ স্বার্থপরতার প্রমান দিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট ভোর রাতে কতিপয় সেনা কর্মকর্তার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যদের। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সিড়িতে শেষ হয় এক দেবদূতের জীবন।  
বঙ্গবন্ধুর বিশ্বাস ছিল এবং তিনি বলতেনও , " কোন বাঙ্গালী আমাকে হত্যা করবে না।" 

বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে সাথে মৃত্যু হয়  তার ই বিশ্বাসেরও।  তাকে হত্যা করেও যেন শান্ত হল না বিশ্বাসঘাতকের দল। তার হত্যাকারীদের  উচ্চ পদস্ত করে যেন পুরস্কৃত করা হচ্ছিল।  বঙ্গবন্ধুকে হত্যাতে শোক প্রকাশ করে তখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। 

"মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না, যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। -নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।" -সাদ্দাম হোসেন 

তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী  বলেছিলেন, "শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্যসাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।" তবে বঙ্গবন্ধুকে কিছু স্বার্থপরগোষ্ঠী হত্যা করলেও তিনি আপন মহিমায় প্রতিটি বাঙ্গালীর হৃদয়ে এখনো শুকতারার উজ্জ্বল হয়ে আছে৷ এই শোকের আগষ্টে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।

মোছাঃ নিশু আক্তার 
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


"কলঙ্ক এসেছে বাংলার বুকে 
সেদিন ১৫ আগস্ট ভোরে
ঝরেছিল বুকের তাজা রক্ত 
প্রকৃতিও কেঁদেছিল অঝোরে।

শোকাবহ ১৫ আগস্ট, এ দিনে বাঙালি জাতির জীবনে রচিত হয় এক কলঙ্কময় অধ্যায়। এই দিনে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির দিশারী, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকেরা। এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুকে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে গড়ে তোলার কারিগর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করে ঘাতকরা। 

অস্তমিত করে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য, মন্থর করে দেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন। সেইদিন ছিল শুক্রবার, ভোরবেলায় সংঘটিত হয় এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। বাংলার ইতিহাসের অন্ধকারময় এই দিনে শিশুপুত্র শেখ রাসেলের সর্বশেষ আকুতিটুকুও গলাতে পারে নি ঘাতকের বিষেভরা মন, ফেরাতে পারে নি বন্দুকের গুলি। 

সেইদিন প্রকৃতি অঝোর নয়নে কেঁদেছিল, প্রকৃতির সে কান্না বাংলার মাটিতে বৃষ্টি হয়ে নেমেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য এনে দিয়েছিলেন যিনি, বাংলার মানুষকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি দিয়েছিলেন যিনি, বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন যিনি, বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির অস্তিত্বে থাকা বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে কেঁড়ে নিয়েছিল যারা তারা কি কখনো ভেবেছিল বাংলার মুজিব একজন নয়, বাংলার মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই নয়। এক মুজিবকে হত্যা করে কি হবে, বাংলার মানুষ মুজিবকে ভালোবাসে, বাংলার মানুষ মুজিবকে হৃদয়ে ধারণ করে, তাই তো লক্ষ লক্ষ মুজিব আজ বাংলা ঘরে ঘরে। মায়ের কোলের প্রতিটি শিশুর হাসি বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি।  তাই, মুজিবের অস্তিত্ব বাঙালির অস্তিত্বে, বাংলাদেশের অস্তিত্বে। আজকের এই দিনে আমাদের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। মুজিব বিরোধী যারা এখনো বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়ার  দেশ হিসেবে অ্যাখ্যা দেয় তাদের বিরুদ্ধে, তাদের অপশক্তির কালো হাতকে রুখে দিতে হবে। 

শোকের শক্তিকে করতে হবে জয়
চেতনায় আছে শেখ মুজিব, কীসে হবে ভয়?
মুজিব চেতনায় বিশ্বাসী মোরা, অন্তরে নাই ভয়
হৃদয়ে আছে শেখ মুজিব, হবে নাকো পরাজয়।

মো: হৃদয় ইসলাম 
শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে"

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিল খামাখাই উত্তেজনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে। একদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা তা নিয়ে সতর্ক অন্যদিকে উত্তরপাড়ায় চলছে বঙ্গবন্ধু হত্যার মহড়া।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের গুলিতে চিরজীবনের জন্য ঘুমিয়ে যায় বাঙালির পিতা। তবে ঘুমিয়ে যায়নি পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত বাঙালি সন্তানেরা । ধানমন্ডির ৩২-এর বাসভবনে থমকে গেছে বাঙালির আত্মপরিচয় । আজও আগস্ট মনে করিয়ে দেয় জাতির পিতা এ জাতির জন্য রেখে গেছেন এক সুবিশাল পরিকল্পনা , পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আদর্শ।

জান্নাতুল মাওয়া লিশা
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।



"আগস্ট মানেই পিতৃহারা বাঙালি "

পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো নৃশংস ও মমান্তিক ঘটনা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ছিলো ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্টের ঘটনা।১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য শোকের দিন।কেননা এই দিন কতিপয় বিপথগামী সেনা ধানমন্ডির ৩২ নং রোডের বাড়িতে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সবাইকে নির্মম ও পৈশাচিকভাবে হত্যা করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক কালো অধ্যায়।তাইতো, এইদিনটি শোকের মাধ্যমে কাটানো হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করেন।

আফিয়া শাহানা
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।