ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ধ্বংস হচ্ছে নদী-খাল

বর্জ্য ফেলা বন্ধে ব্যবস্থা নিন

নদী, খাল বা জলাশয়ে বর্জ্য ফেলার অসুস্থ প্রবণতা দ্রুত রোধ করতে হবে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।


ফারজানা ববি নাদিরা | আপডেট: মঙ্গলবার, জুন ৭, ২০২২

বর্জ্য ফেলা বন্ধে ব্যবস্থা নিন
দখল ও দূষণে ঢাকা এবং এর চারপাশে থাকা নদী ও খালগুলো মরতে বসেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খননের মাধ্যমে নদী-খালগুলো নাব্য করার কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাঙ্খিত ফল দিতে পারছে না। 

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ সমীক্ষায়ও ঢাকার নদী-খালের শোচনীয় অবস্থার চিত্রই উঠে এসেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর ৪৩টি জায়গায় পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৫৬৪ টন বর্জ্য। শীতলক্ষ্যার ৪৩ জায়গায় ৪৩ হাজার ১৮৩ টন, বালু নদের সাত জায়গায় দুই হাজার ১২ টন এবং তুরাগের ৩৬ জায়গায় ১৫ হাজার ৭৭১ টন বর্জ্য পাওয়া গেছে। এসব নদীতে দৈনিক ১১২ টন বর্জ্য ফেলা হয়। 

‘টুওয়ার্ডস আ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেইনেবল প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প-কারখানা এবং শহরের পয়োবর্জ্যরে প্রায় পুরোটাই গিয়ে পড়ছে এসব নদী-খালে। গৃহস্থালি বর্জ্যরেও একটি বড় অংশ নদী-খালেই পড়ছে। 

ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও এই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। সেসব শহরেও নদী-খালের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো অত্যন্ত অপরিকল্পিত ও অস্বাস্থ্যকর। এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ঢাকার পয়োবর্জ্যরে প্রায় শতভাগই যায় ঢাকার পাশে থাকা চারটি নদীতে। এটি কোনোক্রমেই রাজধানী শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হতে পারে না। 

জানা যায়, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকে করেও নানা ধরনের বর্জ্য নিয়ে নদীতে ফেলা হয়। মানুষের মধ্যেও সচেতনতার অভাব খুব বেশি। নদী ও খালের পারে থাকা বেশির ভাগ বাড়িঘরের গৃহস্থালি বর্জ্যও নদী-খালে ফেলা হয়। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এগুলো বন্ধ না করা গেলে নদী-খাল নাব্য রাখার কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। নদী-খাল দূষণের আরেকটি প্রধান কারণ হলো প্লাস্টিক বা পলিথিন দূষণ। বেশির ভাগ নদী, খাল ও জলাশয়ের তলদেশে প্লাস্টিকবর্জ্যরে আস্তরণ তৈরি হয়েছে। এর ফলে পানি ঠিকমতো ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না। ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে কেউই তা মানছে না। বরং বলা যায়, পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। নদী, খাল বা জলাশয়ে বর্জ্য ফেলার অসুস্থ প্রবণতা দ্রুত রোধ করতে হবে। শিল্প-কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। 

জানা যায়, অনেক কারখানায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। যাদের আছে তারাও তা ব্যবহার করে না। অপরিশোধিত বর্জ্যই নদীতে ফেলে। এসব ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। নদীতে কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না। পাশাপাশি নদী ও খাল নাব্য করতে হবে এবং সেগুলোর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা যথাযথ করতে হবে।