নেপাল ছাড়া বাকি পাঁচ দলের জন্যই এবারের এশিয়া কাপ আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের পোশাকি মহড়া। বিশ্বকাপে চোখ রেখে আজ শুরু এশিয়া কাপে যে ধাঁধার উত্তর খুঁজবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান।
বাংলাদেশ
একাদশে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের মতো দুজন কার্যকর অলরাউন্ডার থাকায় একজন অতিরিক্ত ব্যাটার বা বোলার খেলানোর সুযোগ আছে বাংলাদেশের। সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের অভিমত, অতিরিক্ত বোলার দলের বোলিং আক্রমণের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হতে পারে। অন্যদিকে আট ব্যাটার খেলানো হলে থাকে বাড়তি রানের হাতছানি।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে অতিরিক্ত ব্যাটার খেলানোর সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে আটে নেমে ৩৮* ও ১০০* রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। কিন্তু ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারা ওয়ানডে সিরিজে একই কম্বিনেশন তেমন কার্যকর হয়নি। অনেকের ধারণা, একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার কম খেলানো হলে শীর্ষ সাত ব্যাটার আরও দায়িত্বশীল হবেন এবং মিরাজের ব্যাটিং দক্ষতা বাড়বে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত সাত নাকি আট ব্যাটার খেলাবে, এশিয়া কাপের ফলই সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারত
সম্ভাব্য সেরা দলটি এশিয়া কাপে খেলাচ্ছে ভারত। হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা একাদশে থাকায় ভারতের আর এমন কোনো ব্যাটার প্রয়োজন নেই, যিনি বোলিংও পারেন। ভারতের মাথাব্যথার বড় কারণ এখন তাদের মূল চার বোলারের কেউ ব্যাট হাতে তেমন কার্যকর নন। জাসপ্রিত বুমরা, কুলদীপ যাদব, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও মোহাম্মদ সিরাজের মতো মোহাম্মদ শামিও ছক্কা হাঁকাতে পারদর্শী নন। এতে শীর্ষ সাত ব্যাটার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে পারেন না। এজন্যই শার্দুল ঠাকুর ও অক্ষর প্যাটেলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দলে। কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ বিবেচনা করে তাদের যে কোনো একজনকে সম্ভবত আটে খেলানো হবে। তবে এশিয়া কাপের বড় ম্যাচে ভারত দেখে নিতে চাইবে চারজন ১১ নম্বরকে নিয়ে তাদের ব্যাটাররা কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন। বিশ্বকাপে ভারতের এমন বোলার প্রয়োজন, যিনি টুকটাক ব্যাটিংও পারেন।
পাকিস্তান
২০১৯ বিশ্বকাপের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩১টি ওয়ানডে খেলেছে পাকিস্তান। যার অধিকাংশই তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে। ছয় ম্যাচ খেলেছে এমন সব দলের বিপক্ষে, যারা এবারের বিশ্বকাপে নেই। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে খেলেছে তিনটি ওয়ানডে। এশিয়া কাপের আগে তিন ম্যাচের সিরিজে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তান এখন ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। তবে গত চার বছরে ৩১ ওয়ানডের ২২টি জিতলেও শীর্ষ সারির দলগুলোর বিপক্ষে কম খেলায় পাকিস্তানের অপেক্ষায় অগ্নিপরীক্ষা। বড় দলগুলোর বিপক্ষে তাদের সামর্থ্যরে পরীক্ষা হবে এশিয়া কাপে।
শ্রীলংকা
বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে এশিয়া কাপে ব্যাটিং সামর্থ্যরে পরীক্ষায় উতরাতে হবে শ্রীলংকাকে। এ বছর দুবার ওয়ানডেতে ৮০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে তারা। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লংকানদের ২৪৫ রানে আটকে দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। এছাড়া নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তারা দুবার অলআউট হয়েছে যথাক্রমে ২১৩ ও ২৩৩ রানে। বোলারদের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচই জেতে শ্রীলংকা। নড়বড়ে ব্যাটিং ঠিক না হলে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে বিপদে পড়বে তারা। ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের বিপক্ষে শুধু ভালো বোলিং দিয়ে হয়তো শেষ রক্ষা হবে না তাদের।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন সম্ভাবনাকে সাফল্যে অনূদিত করা। দারুণ সব প্রতিভার কারণে আফগান ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় কখনো ছেদ পড়েনি। প্রতিটি সিরিজ ও টুর্নামেন্টে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকে তাদের পারফরম্যান্সে। কিন্তু রশিদ, মুজিব, গুরবাজ, নবী, শাহিদিরা এখনো দলকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে পারেননি। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে সম্ভাবনা জাগিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে আফগানিস্তান। এবার এশিয়া কাপে সেই গেরো খুলতে পারলে বিশ্বকাপে উদিত শক্তি থেকে পরাশক্তি হয়ে উঠতে পারে আফগানরা।