ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ম্যানচেস্টার সিটির ‘ট্রেবল’

স্পোর্টস ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, জুন ১১, ২০২৩

স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ম্যানচেস্টার সিটির ‘ট্রেবল’
দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আর অনেক আশা ভঙ্গের পর অবশেষে ম্যানচেস্টার সিটির হাতে ধরা দিল সেই ‘সোনার হরিণ।‘ ম্যাড়মেড়ে প্রথমার্ধের পর প্রতিপক্ষের মুহূর্তের দুর্বলতায় ডেডলক ভাঙলেন রদ্রি। বাকিটা সময় ওই ব্যবধান ধরে রেখে প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট মাথায় তুলল ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি।

ইস্তানবুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ১-০ গোলে জিতেছে পেপ গুয়ার্দিওলার দল।

গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে গত ছয় বছরে ইংলিশ ফুটবলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে সিটি। এই সময়ে তারা জিতেছে টানা তিনবারসহ মোট পাঁচবার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। সঙ্গে আরও অনেক ট্রফি। বাকি ছিল কেবল এই সর্বোচ্চ সাফল্য, সে প্রতীক্ষাও এবার তাদের শেষ হলো।

চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ জিতে আগেই ঘরোয়া ‘ডাবল’ পূর্ণ করে সিটি। এবার ইউরোপ সেরা হয়ে ‘ট্রেবলের’ স্বপ্নও পূরণ করল তারা। ইংলিশ ফুটবলে দ্বিতীয় এবং ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর প্রথম দল হিসেবে এই অসাধারণ কীর্তি গড়ল তারা।

তবে, স্নায়ুচাপের কারণেই কি-না, ম্যাচের শুরুতে ডে ব্রুইনে-গ্রিলিশদের পায়ে যেন জড়তা ভর করেছিল। প্রতিপক্ষের সামান্য চ্যালেঞ্জে সিটির খেলোয়াড়দের বল হারানো, তাদের গতিহীন ফুটবল আর কালেভদ্রে ধারহীন আক্রমণগুলো ছিল দৃষ্টিকটু।

প্রথম ২৫ মিনিটে ইন্টারই বরং তুলনামূলক উজ্জীবিত ছিল; যদিও নিশ্চিত কোনো সুযোগ এসময়ে তারাও পারেনি তৈরি করতে।

ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ অবশ্য তৈরি করে সিটিই। ডে ব্রুইনের পাস ধরে ক্ষিপ্রতায় ডি-বক্সে ঢুকে দুরূহ কোণ থেকে শট নেন আর্লিং হলান্ড, শরীর দিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা।

৩০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ট্যাকলে পায়ে আঘাত পান ডে ব্রুইনে। মাঠেই কিছুক্ষণ চিকিৎসা নিয়ে খেলা শুরু করেন তিনি, তবে তার চোখে-মুখে অস্বস্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। ছয় মিনিট পর একরকম বাধ্য হয়ে উঠে যান তিনি, বদলি নামেন ফিল ফোডেন।

দলের সেরা তারকার এভাবে প্রথমার্ধেই ছিটকে পড়া সিটির জন্য অনেক বড় ধাক্কা। ২০২১ সালের ফাইনালেও চোট পেয়ে পুরোটা সময় খেলতে পারেননি এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার; ম্যাচটি ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল গুয়ার্দিওলার দল।

বিরতির পরও ওই একইভাবে চলতে থাকে ম্যাচ। ৫৮তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলে দারুণ এক সুযোগ পায় ইন্টার। ডিফেন্ডার মানুয়েল আকানজির অপ্রয়োজনীয় ব্যাকপাস ধরে সবাইকে পেছনে ফেলে লাউতারো মার্তিনেস ঢুকে পড়েন ডি-বক্সে, তাকে বাধা দিতে পোস্ট ছেড়ে অনেকখানি বাঁ দিকে এগিয়ে যান গোলরক্ষক এদেরসন। ততক্ষণে বক্সে ঢুকে পড়েছেন খানিক আগেই বদলি নামা রোমেলু লুকাকু; কিন্তু তাকে পাস না দিয়ে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন বিশ্বকাপজয়ী মার্তিনেস!

ফাইনালের আগে নকআউট পর্বে মাত্র তিনটি গোল হজম করা ইন্টারের জমাট রক্ষণ ৬৮তম মিনিটে মুহূর্তের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে। আর ওই ফাঁকেই কাঙ্ক্ষিত গোলটি আদায় করে নেয় সিটি।

আকানজির পাস পেয়ে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে শট নেন বের্নার্দো সিলভা। প্রতিপক্ষের গায়ে লেগে বল পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় চলে যায়, আশেপাশেই ছিলেন ইন্টারের কয়েকজন খেলোয়াড়, কিন্তু কেউ যথেষ্ট রিফ্লেক্স দেখাতে পারেননি। ছুটে গিয়ে বিনা বাধায় জোরাল শটে বল জালে পাঠালেন রদ্রি।

দুই মিনিট পরই সমতায় ফিরতে পারতো ইন্টার। কিন্তু ফেদেরিকো দিমার্কোর হেড বাধা পায় ক্রসবারে। তারপরও সুযোগ ছিল; ফিরতি বলে আবারও হেড করেন তরুণ ইতালিয়ান ডিফেন্ডার দিমার্কো, এবার বল সামনেই দাঁড়ানো লুকাকুর পায়ে লাগলে হতাশা বাড়ে ইন্টারের।

৮৮তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ইন্টার। বক্সে বাঁ থেকে সতীর্থের হেড একেবারে গোলমুখে পেয়ে যান লুকাকু, সামনে একমাত্র বাধা ছিলেন এদেরসন। হেডে সেই তার পায়েই মেরে বসেন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। এমন সুবর্ণ সুযোগ হারানোর হতাশায় দলটির খেলোয়াড়-কোচ থেকে শুরু করে ভক্ত সমর্থকদের মাথায় হাত উঠে যায়।

পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের একেবারে শেষেও একটা সুযোগ আসে তিনবারের চ্যাম্পিয়নদের সামনে। কিন্তু রবিন গোজেন্সের হেড ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন এদেরসন। নিশ্চিত হয়ে যায় সিটির শিরোপা জয়।

পরমুহূর্তে শেষের বাঁশি বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো সিটি শিবির। শেষ হয় তাদের বহু বছরের অপেক্ষা; শুরু হয় ইউরোপ জয়, না, যেন বিশ্ব জয়ের উৎসব।