সর্বশেষ ২০০৪-০৫ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছিল এসি মিলান। তাই সুযোগ ছিল ১৮ বছর পর রাজসিক প্রত্যাবর্তনের। তবে তাদের কাজটা সেমিফাইনালের প্রথম লেগেই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ফলে ইন্টার মিলানের চেয়ে তাদের জিততে হত অন্তত ২ গোলের বেশি ব্যবধানে। তা তো হয়ইনি, উল্টো ইন্টারের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাউতারো মার্টিনেজের করা গোল খেয়ে বসে। ফলে ২০০৯-১০ মৌসুমের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন দল ইন্টারই স্বপ্নের ফাইনালে উঠে গেল।
৩-০ গোলের অগ্রগাগামিতায় ১৩ বছর পর আবারও ইউরোপসেরার ফাইনালে উঠেছে সিমোন ইনজাগির দলটি। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড রোমেলো লুকাকুর সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে দারুণ বোঝাপড়ায় মিলানের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন মার্টিনেজ। আর তাতেই স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় সর্বোচ্চ সাতবারের ইউরোপসেরা দল মিলানের। তিনটি শিরোপা জেতা ইন্টার ইউরোপসেরার প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠবার ফাইনালে ওঠার পথে গড়ল দারুণ এক কীর্তি। নিজেদের ইতিহাসে কেবল দ্বিতীয়বারের মতো এক মৌসুমে চারবার হারাল মিলানকে। এর আগে তারা ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে একই সৌভাগ্যের মুখোমুখি হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে সান সিরোয় সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হয় দুই মিলান। একই মাঠে প্রথম লেগ স্বাগতিক হয়ে খেলেও ২-০ গোলে হেরেছিল এসি মিলান। তাই দ্বিতীয় লেগের অ্যাওয়ে ম্যাচটি তাদের জন্য কঠিনই ছিল। ম্যাচজুড়ে সমান তালে লড়াই চালিয়ে গেলেও, শেষ হাসি ফুটলো ইন্টারের মুখে।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসে এসি মিলান। প্রথম লেগে নিজেদের কাজ অনেকটাই সেরে রাখা ইন্টারের মনোযোগ ছিল প্রতি-আক্রমণে। তবে পঞ্চম মিনিটে মিলান এগিয়ে যেতে পারতো। ৩৫ গজ দূর থেকে থিও এরনান্দেজের বুলেট গতির শট বেরিয়ে যায় ক্রসবার ঘেঁষে। ঠিকভাবে হয়তো দেখতেও পারেননি ইন্টার গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। কেননা গোল বাঁচানোর প্রচেষ্টায় তিনি জায়গা থেকেই নড়েননি। মিনিট পাঁচেক পরের দৃশ্যটা ইন্টার নিশ্চয়ই ভুলে যেতে চাইবে। প্রায় হতে হতেও এসি মিলানের গোলটি হলো না। অলিভিয়ে জিরোর ক্রস ঠেকাতে গিয়ে বলের নাগাল পাননি ওনানা। ফাঁকা জালে বল প্রায় পাঠিয়েই দিচ্ছিলেন ব্রাহিম দিয়াজ। প্রায় গোললাইন থেকে হেড করে ক্লিয়ার করেন মাত্তেও দারমিয়ান।
১১তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন দিয়াজ। সান্দ্রো তোনালির কাটব্যাকে পেনাল্টি স্পটের কাছে বল পান এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড, কিন্তু তিনি জোরালো শট নিতে পারেননি। ইন্টার গোলরক্ষক ওনানা সেটি ঝাঁপিয়ে ঠেকান। এরপর প্রতি-আক্রমণে সুযোগ আসে ইন্টারের সামনে। ২৪তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে প্রথম শট নেন হেনরিখ মিখিতারিয়ান। সেটি প্রতিহত হওয়ার পর ক্রসবারের ওপর দিয়ে অন্যটি বেরিয়ে যায়।
আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে তুমুল জমে ওঠা লড়াইয়ে ৩৮তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো এসি মিলান। রাফায়েল লেয়াওয়ের দূরের পোস্টে নেওয়া বাঁকানো শট একটুর জন্য লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে তারা অল্পের জন্য বেঁচে যায়। ইন্টারের হাকান কালহানোগ্লুর ফ্রি-কিকে মার্তিনেজের হেডে বল মাইক মাইনানের হাত ছুঁয়ে মুখে বাধা পায়। ৪১তম মিনিটে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের বুলেট গতির শট ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে কোনো গোলের দেখা ছাড়াই দু’দল বিরতিতে যায়।
একইভাবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও প্রতিপক্ষের রক্ষণে প্রবল চাপ ধরে রাখে এসি মিলান। কিন্তু তাদের আক্রমণের ঝাপটা অনায়াসেই সামাল দিতে থাকে ইন্টার। ৭৪তম মিনিটে এই অর্ধের প্রথম ভালো সুযোগেই এগিয়ে যায় দলটি। প্রতি-আক্রমণে রোমেলু লুকাকুর কাছ থেকে বল পেয়ে প্রথমবার শট নিতে পারেননি মার্তিনেজ। পরেরবার বল ফিরে পেয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
এই গোলেই প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যায় ইন্টারের ফাইনাল। এরপর তারা আরও বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে। শেষ দিকের এলোমেলো ফুটবলে আর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মিলান।
আগামী ১০ জুন ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক স্টেডিয়ামের ফাইনালে ইন্টারের প্রতিপক্ষ হবে রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা ম্যানচেস্টার সিটি। দু’দল নিজেদের দ্বিতীয় লিগে মুখোমুখি হবে আজ। এর আগে ২০০৯-১০ মৌসুমে সর্বশেষ ইন্টার যখন ফাইনাল খেলেছিল, বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিও তারাই জিতেছিল।