শুরুতেই রিয়াল মাদ্রিদ পিছিয়ে পড়েছিলো ২-০ গোলে। এমিরেটস স্টেডিয়ামে তখন উল্লাসের ঝড়। এইবার বুঝি রিয়ালের বিপক্ষে প্রতিশোধটা নেয়া হবে! মাত্র ১৪ মিনিটে ২-০ গোলে এগিয়ে গেলে ম্যাচের ফল কী হতে পারে, অগ্রিম সেটা ভেবে এমিরেটসের দর্শকরা সুখ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো।
অন্যদিকে, ১৪ মিনিটের মাথায় ২ গোল হজম করে যেন নড়েচড়ে উঠলো রিয়াল মাদ্রিদ। আড়মোড়া ভেঙে যখন তারা প্রতিপক্ষের ওপর প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লো, তখন লিভারপুল উড়ে গেলো খড়কুটোর মতো। প্রথমার্ধেই সমতায় দল এবং ৬৭ মিনিটেই লিভারপুলের জালে ৫ বার বল জড়িয়ে দিলো ভিনিসিয়ুস আর করিম বেনজেমারা।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগের ম্যাচটি ৫-২ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
নতুন বছরে ছন্দ খুঁজে ফেরা রিয়াল হোঁচট খাচ্ছে বারবার। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে, পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব। লিভারপুলের সমস্যা অবশ্য আরও বেশি, মৌসুমের শুরু থেকেই যে ধুঁকছে তারা।
তবে এ দিন শুরুতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেয় প্রিমিয়ার লিগের দলটি। দারউইন নুনেসের দারুণ গোলের পর থিবো কোর্তোয়ার চরম ভুলের সুযোগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মোহামেদ সালাহ। রিয়াল শিবিরে জাগে আরেকটি হারের শঙ্কা।
তবে লড়াইটা যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের, যেখানে সবসময়ই বাড়তি রোমাঞ্চ অনুভব করে রিয়াল। দলটি উপহার দিল তেমনই উজ্জীবিত পারফরম্যান্স। চমৎকার গোলে ভিনিসিউস দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যবধানও বাড়ান তিনি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে এদের মিলিতাও দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর দুটি গোল করেন চোট কাটিয়ে ফেরা করিম বেনজেমা।
ম্যাচে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যায় লিভারপুল। সালাহর দারুণ পাস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়ে একটু লাফিয়ে সাইড-ফুট শটে গোলটি করেন নুনেস। আগেই অন্যদিকে ঝুকে পড়া গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া কোনো সুযোগই পাননি।
দ্বাদশ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ভালো সুযোগ পান সালাহ। তবে তার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর কোর্তোয়ার অবিশ্বাস্য ভুলে দ্বিতীয় গোল হজম করে রিয়াল।
নিজেদের সীমানায় প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের মুখে ব্যাকপাস দেন দানি কারভাহাল। কোর্তোয়া বুক দিয়ে বল নামিয়ে ক্লিয়ার করতে যাওয়ার আগে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, ততক্ষণে সামনে চলে আসেন সালাহ। প্রতিপক্ষের অমন উপহার পেয়ে কাজে লাগাতে ভুল করেননি তিনি, তড়িৎ শটে খুঁজে নেন ঠিকানা।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সালাহর এটি ৪৪তম গোল; আফ্রিকান খেলোয়াড়দের মধ্যে যৌথভাবে যা সর্বোচ্চ। সমান সংখ্যক গোল আছে কোত দি ভোয়ার সাবেক ফরোয়ার্ড দিদিয়ের দ্রগবার।
দুই গোল খেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়লেও, পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি রিয়াল। ২১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাঁ দিকে বেনজেমার পাস পেয়ে ঘিরে থাকা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে দারুণ কোনাকুনি শটে ব্যবধান কমান ভিনিসিউস।
দুই মিনিট পর মাঝমাঠ থেকে গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে আক্রমণ শাণান ভিনিসিউস। কিন্তু শেষ দিকে গতি কমিয়ে দেন, দুর্বল লক্ষ্যহীন পাসে হারিয়ে ফেলেন বলও। ২৪তম মিনিটে আবারও রিয়ালের গোলমুখে ভীতি ছড়ায় লিভারপুল; তবে সালাহ শট নিতে দেরি করে ফেলেন। মিলিতাও বল ক্লিয়ার করলে হাফ ছাড়ে চ্যাম্পিয়নরা।
৩৬তম মিনিটে আবারও আক্রমণে ভিনিসিউস এবং সৌভাগ্যসূচক গোলে সমতায় ফেরে রিয়াল। অবশ্য দায় এড়াতে পারবেন না আলিসনও।
ডি-বক্সের মুখে ভিনিসিউসের চ্যালেঞ্জে ডিফেন্ডার জো গোমেজ ব্যাকপাস দেন গোলরক্ষককে। ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ বরাবর শট নেন আলিসন, বল ছুটে আসা ভিনিসিউসের পায়ে লেগে জড়ায় জালে।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে ৫৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে অ্যানফিল্ডে সফরকারী দলের খেলোয়াড় হিসেবে জোড়া গোল করলেন ২২ বছর বয়সী ভিনিসিউস। এর আগে ১৯৬৬ সালে ইউরোপিয়ান কাপে আয়াক্সের হয়ে দুটি গোল করেছিলেন ইয়োহান ক্রুইফ, ১৯ বছর ২৩৩ দিন বয়সে।
৪৫তম মিনিটে আরেকটি দারুণ আক্রমণে গোলমুখে রদ্রিগোর উদ্দেশ্যে বল বাড়ান ভিনিসিউস। তবে শেষ মুহূর্তে স্লাইড করে কর্নারের বিনিময়ে বিপদ এড়ান ডিফেন্ডার ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই দেখা মেলে ভিনিসিউসের ক্ষিপ্রতার। তাকে আটকাতে ডি-বক্সের বাঁ পাশে ফাউল করা ছাড়া যেন উপায় ছিল না গোমেজের। লুকা মদ্রিচের নেওয়া ওই ফ্রি কিকেই হেডে রিয়ালকে এগিয়ে নেন মিলিতাও। লিভারপুলের কয়েকজন খেলোয়াড় জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখেন মিলিতাওয়ের হেড।
৫৫তম মিনিটে আবারও ভাগ্য সহায় হয় রিয়ালের এবং তাতে বাড়ে ব্যবধান। ডি-বক্সের ডান দিকে রদ্রিগোর সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে শট নেন বেনজেমা, বল গোমেজের পায়ে লেগে দিক পাল্টে খুঁজে নেয় ঠিকানা। কিছুই করার ছিল না আলিসনের।
৬৭তম মিনিটে দারুণ গোছানো আক্রমণে ব্যবধান আরও বাড়ায় রিয়াল। মাঝমাঠ থেকে কিছুটা এগিয়ে বাঁ দিকে মদ্রিচ খুঁজে নেন ভিনিসিউসকে। বক্সের মুখ থেকে তিনি বল বাড়ান ডান দিকে বেনজেমার উদ্দেশ্যে। ঠাণ্ডা মাথায় বল ধরে আগুয়ান আলিসনকে কাটিয়ে নিখুঁত শটে স্কোরলাইন ৫-২ করেন ফরাসি তারকা।
একের পর এক হার ও ড্রয়ের হতাশাজনক পথচলার মাঝে প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ দুই রাউন্ডে জিতে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু ঘরের মাঠে এভাবে উড়ে যাওয়ায় সেই আশা ফের ফিকে হয়ে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে পড়ার মুখেও পড়ে গেল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে ফিরতি লেগে দুর্দান্ত কিছুই করে দেখাতে হবে লিভারপুলকে। আগামী ১৫ মার্চ রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে হবে পরের ম্যাচটি।
দিনের অন্য ম্যাচে আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে ২-০ গোলে জিতেছে সেরি আয় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা নাপোলি।