দেশের ফুটবলের ঝান্ডা ওড়ানো সাবিনা খাতুন-কৃঞ্চা রানী সরকারদের বেতন খুব শিগগিরই চার গুণ বাড়তে পারে।
সবুজ গালিচায় ফুটবলের ফুল হয়ে ফোটা মেয়েরা সংবর্ধনা কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের বাইরে যে অর্থ পান, তা নগণ্য। ক্যাটাগরিভিত্তিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন তাঁদের যে পরিমাণ অর্থ দেয়, তা দিয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপটে চলা কঠিন। ‘এ’ ক্যাটাগারিতে যে ক’জন আছেন, তাঁদের বেতন ১০ হাজার, বাকিদের কারও ৫, কারও বা ৩ হাজার টাকা।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো এই মেয়েরাও এখন বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে বসেছেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে। মাসিক বেতন ৫০ হাজার, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফি, খাবারের মান বৃদ্ধি, উন্নত মানের বুট চেয়েছেন সাবিনারা।
মেয়েদের দাবিগুলো যথার্থ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে গতকাল সংবাদমাধ্যমকে জানান সালাউদ্দিন।
মেয়েদের চাওয়া ৫০ হাজার হলেও আপাতত ৩৫-৪০ হাজার টাকা দিতে চান দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। বাস্তবায়ন করতে পারলে এক লাফে চার গুণ বেতন বাড়তে যাচ্ছে সানজিদা খাতুন-মনিকাদের।
বাফুফে ভবনেই নারী ফুটবলারদের আবাসিক ক্যাম্প। এক ছাদের নিচে ৬০-৭০ জন ফুটবলার থাকেন। মাসিক কিছু বেতনের সঙ্গে তাঁদের সবকিছুই দেখভাল করে ফেডারেশন। ক্যাম্পে থাকা প্রতি ফুটবলারের জন্য খাবার বাবদ প্রতিদিন বাফুফের ব্যয় করতে হয় ৭০০ টাকা। তাঁদের চাওয়া পূরণ করতে হলে ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ১২০০ টাকা। আর এত দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও ম্যাচ ফি পেতেন না মেয়েরা। এখন প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রায় ১০০ ডলার করে চেয়েছেন তাঁরা।
মেয়েদের এসব দাবি অযৌক্তিক দেখছেন না বলে জানিয়ে সালাউদ্দিন, ‘ভালো একটা সমস্যায় পড়েছি আমি। মেয়েরা আমার কাছে কত জিনিস চেয়েছে; যার সবই যৌক্তিক। আবার এমন জিনিস চেয়েছে, তা শুনতে আমার লজ্জা লাগছে। বেতনটা ৫০ না হোক, ৩০ কিংবা ৪০ যাই করি না কেন; ম্যাচ ফি, উন্নতমানের বুট এবং খাবার অবশ্যই দিতে হবে। যদিও এই জিনিসগুলো আমরা পাইনি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি থাকতে ওরা পাবে না। আজ আমি ফেডারেশনে এসেছি মেয়েদের এসব কাজের জন্যই। তারা ৫০ চেয়েছে, আমি ৩৫ কিংবা ৪০ দিতে চাই। আর এই টাকাটা পাবে জাতীয় দলের ৩০ ফুটবলার। বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভিত্তিতে বেতন দেব। সর্বোচ্চ বেতন হবে ৪০ হাজার টাকা।’
সরকারের কাছে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালের (ডিপিপি) জন্য ৪৫০ কোটি টাকার বাজেট দেয় ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু সেটার ফাইল এখনও পড়ে আছে মন্ত্রণালয়ে। ডিপিপি পাস হলে সেখান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে মেয়েদের এই চাওয়া পূরণ করা যেত বলে জানান সালাউদ্দিন, ‘সরকারের কাছে ডিপিপি পাঠানোর পর আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, ওটা হবে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক সেটা এখনও পড়ে আছে। ডিপিপির তো কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। আমি এরই মধ্যে অনেকের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিয়েছি, যেখান থেকে আমি মেয়েদের এই জিনিসগুলো জোগাড় করে দিতে পারি।’
মেয়েরা সাফল্য এনে দিচ্ছেন। অথচ ট্রফি এনে দিতে না পারা জামাল ভূঁইয়ারা পাচ্ছেন উন্নত মানের সুযোগ-সুবিধা। সিসেলস, ব্রুনাই এবং বাংলাদেশকে নিয়ে মার্চে সিলেটে অনুষ্ঠেয় টাই নেশন্স কাপের প্রস্তুতির জন্য সৌদি আরব যেতে পারেন হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল।
এত সুযোগ-সুবিধা দিয়েও ছেলেদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় নাখোশ সালাউদ্দিন, ‘আপনি যদি লিগ দেখেন, আমার চোখে লাগে জাতীয় দলের জন্য ৬০ ভাগ ফুটবলারই আনফিট। ওই ফিটনেসে ঢাকা লিগ খেলতে পারছে, ওই ফিটনেসে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে পারছে না। কিন্তু ওদের তো আমি নিয়ে ট্রেনিং করাতে পারছি না। এই জন্য আমি কিছুটা বাজেট চেয়েছিলাম সরকারের কাছে। আমাকে দিলে আমি ২৫ জন প্লেয়ার কিনে নিতাম।’