শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল পেল না ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। দ্বিতীয়ার্ধে আরও এক গোল খেয়ে ছিটকে পড়ল ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার উচ্ছ্বাসে মাতল উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভারহ্যাম্পটন। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেল তারা।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড।
২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চদশ স্থানে উঠে এসেছে উলভারহ্যাম্পটন।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভারহ্যাম্পটন। তৃতীয় মিনিটে মাথেউস কুনইয়ার শট ফিস্ট করে ফেরান গোলরক্ষক আলিসন। মুহূর্ত বাদে পাবলো সারাবিয়ার শট যায় বাইরে।
উলভস সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল।
সারাবিয়ার পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাইলাইনের কাছাকাছি চলে যান হাং হি-চান। শট নেওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
চিড় ধরা রক্ষণ জোড়া লাগানো দূরের কথা, দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল।
বাইলাইনের একটু উপর থেকে কুনইয়ার পাস এক ডিফেন্ডারের হেডের পর কিলম্যানও হেডে চেষ্টা করেন লক্ষ্যভেদের। কিন্তু তা ব্লক হওয়ার পর বল চলে যায় ক্রেইগ ডসনের পায়ে; এই ইংলিশ ডিফেন্ডার জোরাল শটে খুঁজে নেন জাল। উলভারহ্যাম্পটনের হয়ে অভিষেকেই গোল পেলেন তিনি।
দুই গোল হজমের পর কোণঠাসা লিভারপুল চেষ্টা করতে থাকে গুছিয়ে ওঠার, কিন্তু বিরতির আগে দারউইন নুনেস, মোহামেদ সালাহরা পারেননি তেমন কিছু করতে। উলভারহ্যাম্পটন গোলরক্ষককে কোনো পরীক্ষার মুখেও পড়তে হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আড়মোড় ভেঙে জেগে উঠে আক্রমণ শাণাতে থাকে লিভারপুল। ৫০তম মিনিটে নাবি কেইতার নিচু শটে অ্যান্ডি রবার্টসনের ফ্লিক গোললাইনের একটু উপর থেকে ফেরান এক ডিফেন্ডার। রবার্টসনের ফিরতি শট ব্লক করেন কিলম্যান।
একটু পর বক্সের ভেতর থেকে সালাহ শট নেওয়ার আগেই ক্লিয়ার করেন এক ডিফেন্ডার। লিভারপুলের হয়ে ২০০তম লিগ ম্যাচ খেলতে নামা মিশরের এই ফরোয়ার্ডের চোখেমুখে ফুটে ওঠে হতাশা। ৬২তম মিনিটে গাপকোর পাস ধরে সালাহর বাঁ পায়ের শট যায় দূরের পোস্ট ঘেঁষে।
নিজের ছায়া হয়ে থাকা নুনেস সুবর্ণ সুযোগ পান ৬৭তম মিনিটে। পাল্টা আক্রমণ থেকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের লম্বা পাস ধরে গতির তোড়ে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলরক্ষক জোসে সা’কে একা পেয়েছিলেন উরুগুইয়ান ফরোয়ার্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজ গোলরক্ষকের গায়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন নুনেস।
৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
শেষ দিকে পাল্টা আক্রমণ থেকে বক্সে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন রাউল হিমেনেস। কিন্তু বুটের ডগা দিয়ে টোকাটা দিতে পারেননি ঠিকঠাক। সহজেই বল আলিসন গ্লাভসবন্দী করেন।
হারের পাশাপাশি আরেক হতাশাও সঙ্গী হলো লিভারপুলের। ২০১২ সালে কেনি ডালগ্লিস কোচ থাকাকালীন লিগে সবশেষ টানা তিন অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরেছিল তারা। আবারও সেই তেতো অভিজ্ঞতা হলো ক্লপের।