ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ |

EN

বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসার লড়াই

স্পোর্টস ডেস্ক | আপডেট: রবিবার, অক্টোবর ১৭, ২০২১

বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসার লড়াই

ফুটবলে কোচই সবকিছু। ক্রিকেট সেখানে অধিনায়কের খেলা। অধিনায়কের একটা সিদ্ধান্তে দল যেমন সাফল্যের আকাশে উড়তে পারে, আবার একটু ভুলেই হতে পারে সর্বনাশ! শুধু কি মাঠ, মাঠের বাইরেও একজন অধিনায়কের প্রভাব কিংবা ভূমিকা দলের সবকিছু বদলে দেয়। সেই কাজটি বহু বছর ধরে দারুণভাবেই করে গিয়েছিলেন বলেই তো মহেন্দ্র সিং ধোনিতে এখনো অনেকে অনুপ্রেরণা খুঁজে পান, মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ঘিরে অনেকের অনিঃশেষ মুগ্ধতা।

 

এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও কি হবেন এমন এক নেতা, যাঁর নাম বাংলাদেশ ক্রিকেট লিখে রাখবে সোনার হরফে? মাহমুদউল্লাহর এবারের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই হচ্ছে একটি কারণে। অতীতে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়ক ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরে সেভাবে সাফল্য বয়ে আনতে পারেননি। যদিও ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর সেই ম্যাচে অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে। সেই ম্যাচে ২৭ বলে করেছিলেন ৬১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। এটুকুই। শুরুর সেই আলো মিলিয়ে গেছে দ্রুতই। এরপর ওই বিশ্বকাপের বাকি চার ম্যাচেই হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় আশরাফুলের দলকে। ওই চার ম্যাচে আশরাফুল করেন সাকল্য ২৬ রান।

 

দুই বছর পর ইংল্যান্ডে হওয়া বিশ্বকাপটা তো অধিনায়ক আশরাফুলের জন্য আরও হতাশাজনক অধ্যায় হয়ে আছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দৌড় থেমে যায় দুই ম্যাচেই। ব্যাট হাতেও অধিনায়ক আশরাফুল ছিলেন ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পরে হারাতে হয় নেতৃত্বও।

 

২০১০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ঠিক ছাপ রেখে গেলেও নেতৃত্বে সাফল্য দেখাতে পারেননি বাঁহাতি অলরাউন্ডার। দুই ম্যাচের দুটিতে হেরেই দেশে ফিরে বাংলাদেশ। অবশ্য সাকিব ৭৫ রানের সঙ্গে শিকার করেন চার উইকেট।

 

এর পরের দুটি বিশ্বকাপেই অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ২০১২ বিশ্বকাপেও অতীতের মলিন পরিসংখ্যান বদলাতে পারেনি বাংলাদেশ। দুটিতেই হেরে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ। মুশফিকও ব্যাট হাতে বলার মতো কিছু করতে পারেননি। অবশ্য ২০১৪ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান নেপালকে মুশফিকের দল হারালেও আবার বড় অঘটনের জন্ম দেয় হংকংয়ের কাছে হেরে। সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরে নকআউটের আগেই দর্শক হয়ে যায় বাংলাদেশ।

 

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই দলটিই কিনা পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চূড়ান্ত ব্যর্থ। এবারও সাত ম্যাচের বিপরীতে জয় দুটি। পুরো টুর্নামেন্টে মাশরাফির অবদান ৩১ রান উইকেট। এটিই শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়কের কাছে।

 

সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই বাংলাদেশের জন্য যেন অপেক্ষা করে দুঃস্বপ্ন আর হতাশা! বিশ্বকাপের প্রতিটি পর্বে অংশ নিলেও এখনো নকআউটের বৈতরণিই পার হতে পারেনি বাংলাদেশ দল। চার-ছক্কার এই খেলায় বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা এতটাই মলিন যে, টেস্টের সেরা ১০ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে। বিশ্বকাপে পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে ১৯টিতেই হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপে অন্য দলগুলোর জয়ের হার যেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি, সেখানে বাংলাদেশের জয়ের হার মাত্র ২০.৮৩ শতাংশ।

 

এবার সেই ধূসর পরিসংখ্যান মোছার বড় চ্যালেঞ্জটা মাহমুদউল্লাহর সামনে।

 

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ এবার বাংলাদেশের দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। সেদিক দিয়ে সম্ভাবনা খুব ভালো। তবে এটা ঠিক, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে সেভাবে ভালো দল হয়ে ওঠেনি। সেদিক চিন্তা করলে একটু ভয় তো আছেই।

 

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। মাহমুদউল্লাহ কি সেই রীতি ভাঙতে পারবেনএমন প্রশ্নে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও এখনো সেভাবে সাফল্য পায়নি, একটা বিশ্বকাপও জেতেনি। সেখানে তো বাংলাদেশ অনেক দূরে। আর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেও দারুণ ব্যাটার। ফর্মেও আছে। আশা করছি, তার নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশকে দেখতে পাব বিশ্বকাপে।

 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম দুঃসময়ে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে একাধিকবার দলের দায়িত্বের ভার মাহমুদউল্লাহর কাঁধে উঠলেও পাকাপাকিভাবে টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব পান ২০১৯ সালের অক্টোবরে। সাকিব আল হাসান আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়লে এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকেই ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের অধিনায়ক বেছে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বড় কঠিন সময়ে দায়িত্বভার পেলেও গত দুই বছরে দলকে তিনি নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগও পেয়েছেন।

 

এই সময়ে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে দারুণ সাফল্যও পেয়েছে বাংলাদেশ। তাঁর অধীন ২৭ ম্যাচের মধ্যে ১৩টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। জয়ের হারটাও বাংলাদেশের যেকোনো অধিনায়কের চেয়ে বেশি৪৮.১৪। কিন্তু এই জয়ের ৯টিই যে এসেছে ঘরের মাঠে। এখানেই মাহমুদউল্লাহর চ্যালেঞ্জটা। সেই চ্যালেঞ্জটা যে একটু কঠিনই হচ্ছে, এর মধ্যেই আঁচ পেয়েছে বাংলাদেশ। আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচের দুটিতেই হার বুঝিয়ে দিলপরীক্ষাটা সহজ হবে না মাহমুদউল্লাহদের। বাছাইপর্ব পেরিয়েই যেতে হবে সুপার টুয়েলভসে। পথটা বেশ কণ্টকাকীর্ণই বটে।

 

অবশ্য বিশ্বকাপের মঞ্চে যাওয়ার আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী মাহমুদউল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রশ্নোত্তর পর্বে এবারের বিশ্বকাপে নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে আমরা যতটা সম্ভব নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। সুপার টুয়েলভসে ওঠাই প্রাথমিক লক্ষ্য। সুপার টুয়েলভসে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। এখানে আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই।

 

নিজেদের সেরা খেলাটা কীভাবে খেলতে হবে, সেটি অধিনায়ককেই আগে করে দেখাতে হবে। সতীর্থদের পথ দেখিয়ে দিতে, অনুপ্রাণিত করতে পারফরম্যান্সের চেয়ে সেরা উপায় কী হতে পারে! আর সেটি হলেই ব্যর্থতার পুরোনো বৃত্তটা ভাঙা যাবে অনায়াসে।