সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে কেবল বিশ্বকাপটাই পাওয়া হচ্ছিল না লিওনেল মেসির। অবশেষে সেই অপূর্ণতাও ঘুচালেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ফ্রান্সের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের ফাইনালে জয়ের পর মেসি ও আর্জেন্টিনাকে অভিনন্দন জানালেন ফুটবল কিংবদন্তি পেলে।
লুসাইল স্টেডিয়ামে রোববার বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ফাইনালগুলোর একটি উপহার দিয়েছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। ৬ গোলের রোমাঞ্চ, উত্তেজনায় ভরা ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। পরে টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্তিনেসের নৈপুণ্যে ৪-২ ব্যবধানে জিতে উল্লাসে মাতে লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নরা।
বেশ কিছু দিন ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অন্ত্রের ক্যান্সারে ভোগা পেলে। সেখানে থেকেও বৈশ্বিক আসরের খোঁজখবর রেখেছেন একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা এই ব্রাজিলিয়ান।
বিশ্ব সেরার মঞ্চে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে দিয়েগো মারাদোনার একক নৈপুণ্যে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছিল আলবিসেলেস্তেরা। লম্বা সময় পর ঠিক যেন কিংবদন্তির পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন মেসি। তার কাঁধে ভর করেই তৃতীয় শিরোপা জিততে পেরেছে লাতিন আমেরিকার দেশটি।
২০২০ সালের নভেম্বরে ৬০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মারাদোনা। ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে পেলে লিখেন, ওপারে বসে হয়তো মেসিদের সাফল্য উপভোগ করছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।
“অভিনন্দন আর্জেন্টিনা! নিশ্চিতভাবে দিয়েগো এখন হাসছে।”
সময়ের সেরা ফুটবলার তো বটেই, অনেকের চোখে আগে থেকেই সর্বকালের সেরাদের একজন মেসি। তার নামের অজস্র রেকর্ড, অর্জন, কীর্তি। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে বিশ্ব জয় ছাড়া সম্ভাব্য সব ট্রফিই এতদিন তার ছিল। এখন বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটায়ও চুমু আঁকতে পারলেন রেকর্ড ৭ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই মহানায়ক।
৩৫ বছর বয়সে এসেও এবারের বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স দেখালেন মেসি, তা অবিশ্বাস্য। মোট ৭টি গোল করেন তিনি। সতীর্থদের তিনটি গোলে রাখেন অবদান। ফাইনালেও দুইবার জালের দেখা পেয়েছেন এই জাদুকর। আসর জুড়ে অসাধারণ খেলায় ২০১৪ সালের পর আবারও টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন মেসি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দুইবার এই পুরস্কার জেতা একমাত্র খেলোয়াড় তিনি।
পেলের মতে, এমন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একটি বিশ্বকাপ প্রাপ্য ছিল মেসির।
“বরাবরের মতো আজও চিত্তাকর্ষক উপায়ে ফুটবল তার গল্প বলে চলেছে। মেসির প্রথম বিশ্বকাপ জেতা, এটা তার পথচলায় প্রাপ্য।”
দল হারলেও ফাইনালে নিজের কাজ বেশ ভালোভাবেই করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্টের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ৮২ বছর বয়সী পেলে তাকে সহানুভূতি জানিয়েছেন।
“প্রিয় বন্ধু এমবাপে, একটি ফাইনালে ৪ গোল করেছো। আমাদের খেলাটির দুর্দান্ত ভবিষ্যতের জন্য দর্শনীয় এই পারফরম্যান্স দেখা কী দারুণ এক উপহারই না ছিল।”
কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমক বোধহয় দেখিয়েছে মরক্কো। স্বপ্নের পথচলায় গ্রুপ সেরা হয়ে নকআউট পর্বে উঠে তারা পেরিয়ে যায় একের পর এক ধাপ। আরব ও আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেমি-ফাইনালে খেলে মরক্কো। তাদেরকেও অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি পেলে।
“অবিশ্বাস্য একটি বিশ্বকাপের জন্য মরক্কোকে অভিনন্দন না জানিয়ে থাকতে পারি না। আফ্রিকার জ্বলে উঠতে দেখে দারুণ লাগছে।”