টেস্ট ক্রিকেটে এতকাল ১০৯ জন ব্যাটারের অভিষেকেই সেঞ্চুরির দুর্দান্ত কৃতিত্ব ছিল। সেই দীর্ঘ তালিকায় নাম আছে তিন বাংলাদেশি- আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ আশরাফুল আর আবুল হাসান রাজুর। এবার নতুন আরও একটি নাম যুক্ত হলো।
টেস্ট ক্রিকেটে সুদীর্ঘ ইতিহাসে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার দুর্লভ কৃতিত্বের মালিক হলেন বাংলাদেশের জাকির হাসান। আজ ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অনবদ্য শতক উপহার দিয়েছেন সিলেটের ২৪ বয়সী বাঁহাতি উইলোবাজ।
৪ বছর আগে (২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি) শেরে বাংলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বছর বয়সে অভিষেক হয় এ উইকেটকিপার কাম টপঅর্ডার ব্যাটারের। তবে সেটা ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললেও কোন ফরম্যাটে আর জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাননি। হয়তো এবারও হতো না। এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবাল চোটে পড়ায়ই কপাল খুলে জাকিরের। সেই সুযোগটা লুফে নিলেন দুই হাতে।
জাকির অবশ্য যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই ঢুকেছেন টেস্ট দলে। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগে (২৯ নভেম্বর) কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ভারতীয় ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি। যে ইনিংস বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে বাঁচায় নিশ্চিত পরাজয় থেকে।
চলতি টেস্টে নিজের প্রথম ইনিংসেই বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল জাকিরকে। সতর্ক ও সাবধানি শুরু করা জাকির ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় ভুল করে বসেন। অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে ফেরেন ক্যাচ হয়ে।
তবে দ্বিতীয়বার এই ভুল করেননি। সামনে ৫১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড লক্ষ্য। ম্যাচ বাঁচাতে উইকেটে কাটাতে হবে পুরো ২ দিন। এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ওপেনিং পার্টনার নাজমুল হোসেন শান্তকে (৬৭) নিয়ে জাকির গড়েন ১২৪ রানের জুটি।
শান্ত আউট হওয়ার পর ইয়াসির আলী (৫) আর লিটন দাস (১৯) সঙ্গ দিতে পারেননি। তবে দমে যাননি জাকির। ধৈর্য, সংযম দেখিয়ে বলের মেধা ও গুণ বিচার করে খেলার পাশাপাশি আলগা ডেলিভারিগুলো থেকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পৌঁছে গেছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে।
অভিষেক টেস্টে এমন লড়াকু ইনিংস, জাকিরের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে। জাতীয় দলেও জায়গাটা পাকা করে নেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন, বলাই যায়।
টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশের ৪ সেঞ্চুরিয়ান
১. আমিনুল ইসলাম বুলবুল (২০০০ সালের নভেম্বরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ১৪৫)
২. মোহাম্মদ আশরাফুল (২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১১৪)
৩. আবুল হাসান রাজু (২০১২ সালের ২১ নভেম্বর খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৩)
৪. জাকির হাসান (২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১০০)।