কাতার বিশ্বকাপে বি গ্রুপে ইংল্যান্ড-ইরান ম্যাচে নিজ দলের সতীর্থের সঙ্গে সংঘর্ষে নাকে-মুখে গুরুতর আঘাত পান ইরানের গোলরক্ষক আলী রেজা বেইরানভান্দ; কয়েক মিনিট পর উঠে দাঁড়ালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, স্ট্রেচারে করে তাকে নেওয়া হয় মাঠের বাইরে।
ইরানি গোলরক্ষকের গুরুতর ইনজুরি, প্রথমার্ধের বিরতি আগে অতিরিক্ত সময় এবং শেষ ধাপের অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ৯০ মিনিটের খেলা গিয়ে ঠেকে ১১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে। বিশ্বকাপ ফুটবলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এত বেশি অতিরিক্ত সময় এর আগে দেখা যায়নি।
কাতার বিশ্বকাপে এই নতুন প্রবণতা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এত বেশি অতিরিক্ত সময় কেন দিচ্ছে?
বিবিসি লিখেছে, বিশ্বকাপের ৯০ মিনিটের খেলার বাইরে প্রথম পাঁচ ম্যাচেই অতিরিক্ত ৮৫ মিনিট সময় দিয়েছেন রেফারিরা। ইংল্যান্ড-ইরান ম্যাচের পর মঙ্গলবার সৌদি আরব ও আর্জেন্টিনরার ম্যাচে প্রথমার্ধে ৭ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ সময়ে আরও ১৪ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়।
এই অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কারণ- ম্যাচে খেলোয়াড়দের ইনজুরি, ভিডিও অ্যাসিসটেন্টের সহায়তায় রেফারির সিদ্ধান্ত নেওয়া, খেলোয়াড় পরিবর্তন, পেনাল্টি এবং কখনো কখনো কিছু খেলোয়াড়ের ইচ্ছাকৃত সময় নষ্ট করার ক্ষতিপূরণ।
ফিফার রেফারি কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরলুইগি কোলিনা গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, কাতারে প্রতিটি ম্যাচে কত সময় নষ্ট হয়, তার হিসাব রাখতে চার কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও সেটি করা হয়েছে।
কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “রাশিয়া টুর্নামেন্টে অপচয় বা নষ্ট হওয়া সময়ের যথার্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আমরা, যে কারণে আপনি ছয়/সাত এমনকি আট মিনিট পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় দেখেছিলেন।
“ভাবুন, প্রথমার্ধে আপনারা তিন গোল দিয়েছেন; আর সেই গোল উদযাপন এবং পুনরায় খেলা শুরু করতেই চার- থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগিয়ে দিচ্ছেন। আর এসব কারণে এবারের ম্যাচগুলোতে অতিরিক্ত সময় দিয়ে খেলা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
অপটার হিসাবে, এক বিশ্বকাপের প্রথম বা দ্বিতীয়ার্ধে সবচেয়ে বেশি সময় ‘স্টপেজ টাইম’ বা অতিরিক্ত সময়ের রেকর্ডও হয়ে গেছে এবারের বিশ্বকাপের ২১ ও ২২ নভেম্বরের ম্যাচগুলোতে।
ইংল্যান্ড-ইরান ম্যাচে প্রথমার্ধে অতিরিক্ত সময় লেগেছে ১৩ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড; দ্বিতীয়ার্ধে ১৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড। আর্জেন্টিনা-সৌদি আরব দ্বিতীয়ার্ধে ১৩ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস দ্বিতীয়ার্ধে ১০ মিনিট ৩২ সেকেন্ড। সেনেগাল- নেদারল্যান্ড দ্বিতীয়ার্ধে ১০ দশমিক ৩ সেকেন্ড দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সময় বেশি দেওয়ার কারণে খেলার অন্তিম মুহূর্তেও কিছু গোল হয়েছে। ঘরির কাঁটায় যখন ১০২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড চলছিল, তখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইরানের মেহেদি তারেমি পেনাল্টিতে গোল করেন। এরপর নেদারল্যান্ডসের হয়ে ডেভি ক্ল্যাসেন ৯৮ মিনিট ১৭ সেকেন্ড গোল করেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা চলছে। খেলার অপচয় বা নষ্ট সমসয় পুষিয়ে দিতে ফিফার এই উদ্যোগের অনেকে প্রশংসা করছেন। আবার অনেকের কাছে এটি অযাচিত দীর্ঘ সময় বলে মনে হচ্ছে।