পরীক্ষার খাতায় নকল করে পাস করা গেলেও মেধার শূন্যতা কখনোই চাপা রাখা যায় না। তেমনি লবিং করে জাতীয় দলে ঢুকলেও খেলার মাঠে পারফরম্যান্স না করলে সেখানে টিকে থাকা যায় না- বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে কঠিন এই শিক্ষাটাই পেয়েছেন সাব্বির রহমান রুম্মান। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর থেকে জাতীয় দলে ফিরতে লবিং করছিলেন ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটার।
বিসিবির একটি সূত্র জানায়, নির্বাচকদের কাছে টানা ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে একজন পরিচালকের দ্বারস্থ হন সাব্বির। তাঁর কাছে কান্নাকাটি করে অনুনয়-বিনয়ে পরিচালকের মন জয় করে নেন। জাতীয় দলের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এভাবেও সাব্বিরকে দলে ঢুকিয়ে চরম অন্যায় করেছেন ওই পরিচালক, সেইসঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন দল নির্বাচনকে।
এভাবে পেছনের দরজা দিয়ে জাতীয় দলে ফিরতে পারলেও এশিয়া কাপ, দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা ব্যর্থ হন তিনি। একপর্যায়ে কোচিং স্টাফরাও এই ব্যাটারের মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ফলে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে নিউজিল্যান্ড থেকেই দেশে ফিরতে হচ্ছে সাব্বিরকে। এশিয়া কাপের দলে জায়গা পেতে সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানের মধ্যে লড়াই হচ্ছিল। বাংলাদেশ 'এ' দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে একটি হাফ সেঞ্চুরি করে এশিয়া কাপ খেলা নিশ্চিত করেন তিনি। মেকশিফট ওপেনার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে সাব্বিরকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করান পরামর্শক কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম। টানা চার ম্যাচ খেলে রান করেন ৫, ০, ১২ ও ১৪। মিরাজের সঙ্গে একটিও জুটি গড়তে পারেননি তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি মূল ধারার গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মোহ ভাঙে কোচ শ্রীরামেরও। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তো ব্যর্থ সাব্বিরের নাম কেটে দেন বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে। কেঁদে-কেটেও শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি তাঁর।
জাতীয় দল-সংশ্নিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, 'যেভাবেই হোক, জাতীয় দলে একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সাব্বিরকে। এটা কাজে লাগাতে পারত সে। টানা চার ম্যাচ খেলে রান তো করেইনি, উল্টো মিস ফিল্ডিং করে হাসতে দেখেছি। উল্টো টিকটক বানিয়ে হাসিঠাট্টার পাত্র হয়েছে। সোজা পথে দলে আসেনি তো, তাই মূল্যটা বুঝতে পারেনি। এভাবে কাউকে দলে নেওয়া ঠিক না। শুধু শুধুই বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে।'
যে সৌম্যকে টপকে জাতীয় দলে সুযোগ নিয়েছিলেন সাব্বির, সেই ওপেনারের কাছেই জায়গা হারালেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফিরতি লেগ ম্যাচে খেলার সুযোগ দিলে ইতিবাচক ব্যাটিং করে বিশ্বকাপ দলে ঢোকার দাবি জোরালো করেন সৌম্য। সাব্বিরের দেশে ফেরার দিনে সৌম্য বিশ্বকাপের মঞ্চে। সৌম্য প্রমাণ দিলেন, লবিং না করেও খেলা যায় বিশ্বকাপে। প্রথম পর্যায়ে সাব্বিরকে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে দেওয়া পরিচালকও বুঝে গেছেন, সৌম্যর সঙ্গে অন্যায় করেছিলেন তাঁরা। এই কর্মকর্তাকেও একটা সময়ে বলতে শোনা গেছে, 'সাব্বিরকে দিয়ে হবে না' জাতীয় কথাবার্তা।
সৌম্যর বিশ্বকাপ দলে ফেরা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের যুক্তি হলো, 'ওকে আমরা গত কিছুদিন প্রস্তুত করেছি। সে নিজেকে প্রমাণ করেই দলে ঢুকেছে।' ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলেও সাব্বিরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি দেখে। সেবার বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলে ৩৬ রান করেছিলেন তিনি। কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছিল, ছলচাতুরী দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে চেয়েছিলেন সাব্বির। সত্যের কল বাতাসে নড়ে, তাই শেষ পর্যন্ত আর দলে থাকতে পারেননি তিনি।
সূত্র: সমকাল