ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, অক্টোবর ৬, ২০২৪ |

EN

শেষ হলো এক কিংবদন্তির পথচলা

স্পোর্টস ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

শেষ হলো এক কিংবদন্তির পথচলা

ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। সবকিছুই ছিল নির্ধারিত। তারপরও বিদায়ের সুরে ছুঁয়ে গেল আবেগ। সাফল্যরাঙা ক্যারিয়ারের একেবারে অন্তিম লগ্নে শেষবারের মতো কোর্টে নামলেন রজার ফেদেরার। জুটি বাঁধলেন এতদিনের প্রবল প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালের সঙ্গে। শেষটা যদিও বিজয়ীর বেশে হলো না। তাতে কী? ফেদেরার মানেই তো চ্যাম্পিয়ন। তার ২৫ বছরের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের পুরোটাই এক মহাকাব্য।

নিয়মিত না হলেও দীর্ঘদিন চোটের সঙ্গে লড়াই করে খেলে যাচ্ছিলেন ফেদেরার। কিন্তু একটা সময় তো থামতেই হতো, বলতেই হতো-আর নয়। উপলব্ধিটা আসার পর আর দেরি করেননি তিনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জানিয়ে দেন, বিদায় বলার সময় হয়েছে।

লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় শুক্রবার রাতে সেটাই আনুষ্ঠানিক রূপ পেল। লেভার কাপের দ্বৈতে টিম ইউরোপের হয়ে বন্ধু-প্রতিদ্বন্দ্বী নাদালের সঙ্গে কোর্টে নামলেন শেষবারের মতো। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ের পর ম্যাচটা ৪-৬, ৭-৬(৭-২), ১১-৯ গেমে জেতে টিম ওয়ার্ল্ড’সের জুটি জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটি।

টেনিসের ‘বিগ থ্রি’-এর দুই নাদাল-ফেদেরারের বিপক্ষে এমন রোমাঞ্চকর জয় নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় পাওয়া সক-টিয়াফোর জন্য, তবে ম্যাচটা তো ফেদেরারের। তাইতো, ম্যাচ শেষ হতে হতেই ফলাফলের গুরুত্ব মুহূর্তেই যেন ফিকে হয়ে গেল। শুরু হলো ফেদেরারের বিদায় নেওয়ার পালা।

দুই প্রতিপক্ষকে হাসি মুখে অভিনন্দন জানালেন, নাদালকেও প্রথমে হাসিমুখে আলিঙ্গন করলেন। এরপরই, মুখে বিষন্নতা ভর করল ফেদেরারের। ভিজে উঠল চোখ।



টিম ইউরোপের সতীর্থদের মাঝে যেতেই আর নিজেকে পারলেন না আটকাতে। নাদালকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। প্রিয় বন্ধুর বিদায়ে নাদালও পারলেন না নিজেকে ধরে রাখতে।

এগিয়ে চলল সময়। নিজেকে সামলে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শুরুটা স্বাভাবিকভাবেই করলেন ফেদেরার, তবে দু’কথা বলার পর কেঁদে ফেললেন আবার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, তিনি আজ সুখী, কোনো কষ্ট নেই।



“যেকোনো ভাবে সময়টা আমরা পার করে দেব। চমৎকার একটা দিন। সবাইকে বলেছি যে আমি খুশি, দু:খিত নই। এখানে থাকতে পেরে দারুণ লাগছে।”

“রাফার সঙ্গে খেলা এবং এখানে সব গ্রেট, কিংবদন্তিদের পাওয়াটা দুর্দান্ত, সবাইকে ধন্যবাদ।”

গ্যালারিতে ফেদেরারের পরিবারের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। জীবনে সবসময় পাশে থাকার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান স্ত্রী মিরকা ফেদেরারকে। ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানান বাবা-মাকে।

“সবাই এখানে আছে, আমার ছেলে মেয়েরা আছে। আমার স্ত্রী খুব সাপোর্টিভ। সে আমাকে অনেক, অনেক আগেই থামাতে পারত; কিন্তু সে তা করেনি। সে আমাকে খেলা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে, খেলতে দিয়েছে। ধন্যবাদ তোমাকে।”

“একটা বিষয় কিছুটা মজার যে সবসময় আমরা আমার মাকে সবকিছুর জন্য দোষ দেই, কারণ তাকে ছাড়া অবশ্যই আমি এখানে থাকতাম না। আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ। সবসময় তারা পাশে থেকেছেন।”

“সবাইকে ধন্যবাদ, অনেক মানুষকে ধন্যবাদ দিতে হবে। অবিশ্বাস্য একটা যাত্রা ছিল।”

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে পেশাদার টেনিসে পা রাখা ফেদেরার সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে নিয়ে গেছেন গ্রেটদের কাতারে। জিতেছেন কত না শিরোপা।

উইম্বলডনে রেকর্ড আট, ইউএস ওপেনে টানা পাঁচ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ছয় ও ফরাসি ওপেনে এক-মোট ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ঝুলিতে নিয়ে ৪১ বছর বয়সে ইতি টানলেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের। এক হাজার ৫২৭টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে।