দুই দল আগেই নিশ্চিত করেছে ফাইনাল। ম্যাচটিকে বলা যায় তাই একরকম পোশাকি মহড়া। যেখানে দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালে রাখলেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকশানারা। রান তাড়ায় চাপের মুখে চমৎকার এক ইনিংস খেললেন পাথুম নিসানকা। পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ের প্রস্তুতি সারল শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপে সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচে শুক্রবার শ্রীলঙ্কার জয় ৫ উইকেটে। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ১২১ রানে গুটিয়ে দিয়ে ১৮ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দাসুন শানাকার দল।
২ রানে ২ উইকেটের বিপর্যয় থেকে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার নায়ক নিসানকা। ইনিংস শুরু করতে নেমে ৪৮ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
বোলিংয়ে ৩ উইকেটের পর স্রেফ ৩ বলে ১০ রানের ক্যামিওতে জয় নিয়ে ফেরেন হাসারাঙ্গা। সঙ্গে দুটি ক্যাচ নিয়ে ও একটি রান আউটে ভূমিকা রেখে ম্যাচের সেরাও এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
এবারের আসরে এই নিয়ে টানা চার ম্যাচে রান তাড়ায় জিতল শ্রীলঙ্কা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৮৩, সুপার ফোরে আফগানিস্তানের ১৭৫ ও ভারতের ১৭৩ রান তাড়ায় জিতেছিল লঙ্কানরা।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা জিতল টানা চার ম্যাচ। ২০১৯ সালের অক্টোবরে লাহোরে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
ফাইনাল সামনে রেখে শাদাব খান ও নাসিম শাহকে এই ম্যাচে বিশ্রাম দিয়ে পাকিস্তান খেলায় হাসান আলি ও উসমান কাদিরকে। চারিথ আসালাঙ্কা ও আসিথা ফার্নান্দোকে বাইরে রেখে শ্রীলঙ্কা একাদশে আনে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও প্রমোদ মাদুশানকে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা ভালো হয়নি। ছন্দে থাকা মোহাম্মদ রিজওয়ান চতুর্থ ওভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১৪ রান করে। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটটি পান মাদুশান।
২৮ বছর বয়সী এই পেসারের পরের বলে ঠিকমতো খেলতে না পেরে ক্যাচের মতো তুলেছিলেন বাবর আজম। শর্ট কাভারে লাফিয়ে উঠে অল্পের জন্য বলের নাগাল পাননি ফিল্ডার।
তিন নম্বরে নেমে ভালো করতে পারেননি ফখর জামান। ১৮ বলে ১৩ রান করে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
আসরে প্রথম চার ম্যাচে ৩৩ রান করা বাবর এ দিন থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। হাসারাঙ্গাকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন পাকিস্তান অধিনায়ক। তার ২৯ বলে ৩০ রানই শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকে ইনিংস সর্বোচ্চ।
অন্যরা এরপর যেন উইকেট পতনের মিছিলে যোগ দেন। হাসারাঙ্গা তার কোটার শেষ ওভারের শেষ দুই বলে বোল্ড করে দেন ইফতিখার আহমেদ ও আসিফ আলিকে। এর আগে-পরে দুই ওভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন খুশদিল শাহ ও হাসান।
তখন ১৬ ওভারে পাকিস্তানের স্কোর ৭ উইকেটে ৯৫! সেখান থেকে তারা ১২১ পর্যন্ত যেতে পারে মূলত মোহাম্মদ নওয়াজের দৃঢ়তায়। শেষের আগের ওভারে রান আউট হন তিনি ১৮ বলে ২ ছক্কা ও একটি চারে ২৬ রান করে। পাকিস্তান গুটিয়ে যায় পাঁচ বল বাকি থাকতে।
৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার হাসারাঙ্গা। মাদুশান ও থিকশানা সমান ২১ রান দিয়ে নেন ২টি করে উইকেট। ধনঞ্জয়া ৪ ওভারে স্রেফ ১৮ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় খুব বাজে। প্রথম দুই ওভারে তারা ২ উইকেট হারায় ২ রানে।
মোহাম্মদ হাসনাইনের শরীর থেকে বাইরের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন কুসল মেন্ডিস। তিনে নেমে হারিস রউফের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন দানুশকা গুনাথিলাকা।
হাসনাইনের পরের ওভারে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন ধনঞ্জয়া। বোলারের হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায় বল। যদিও বেশ কঠিন ছিল সেটি।
সেই সুযোগ অবশ্য কাজে লাগাতে পারেননি ধনঞ্জয়া। রউফের বলে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৯ রান করে। পাঁচ ওভারে ২৯ রানে তখন ৩ উইকেট নেই শ্রীলঙ্কার।
দলকে এরপর এগিয়ে নেন নিসানকা ও ভানুকা রাজাপাকসা। দুই জনে গড়েন ৩৯ বলে ৫১ রানের জুটি। রাজাপাকসাকে (১৯ বলে ২৪) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার কাদির।
তাতে অবশ্য শ্রীলঙ্কার জয় নিয়ে সংশয় জাগেনি। পঞ্চম উইকেটে শানাকার সঙ্গে ৩৩ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন নিসানকা। জয় থেকে ৯ রান দূরে থাকতে ‘বার্থডে বয়’ শানাকা (১৬ বলে ২১) ফিরলেও কাজ শেষ করে আসেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। হাসনাইনের ওই ওভারেই তিন বলের মধ্যে দুটি চার মেরে ম্যাচের ইতি টেনে দেন হাসারাঙ্গা।
একই মাঠে আগামী রোববার হবে ফাইনাল। এই হারের বদলা পাকিস্তান নিতে পারবে, নাকি শ্রীলঙ্কা শিরোপা উৎসবে মাতবে, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৯.১ ওভারে ১২১ (রিজওয়ান ১৪, বাবর ৩০, ফখর ১৩, ইফতিখার ১৩, খুশদিল ৪, নওয়াজ ২৬, আসিফ ০, হাসান ০, কাদির ৩, রউফ ১, হাসনাইন ০*; মাদুশাঙ্কা ৪-০-৩৫-০, থিকশানা ৪-০-২১-২, মাদুশান ২.১-০-২১-২, ধনঞ্জয়া ৪-০-১৮-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-২১-৩, করুনারত্নে ১-০-৪-১)
শ্রীলঙ্কা: ১৭ ওভারে ১২৪/৫ (নিসানকা ৫৫*, মেন্ডিস ০, গুনাথিলাকা ০, ধনঞ্জয়া ৯, রাজাপাকসা ২৪, শানাকা ২১, হাসারাঙ্গা ১০*; হাসনাইন ৩-০-২১-২, রউফ ৩-০-১৯-২, হাসান ৩-০-২৫-০, নওয়াজ ৪-০-২১-০, কাদির ৪-০-৩৪-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ভানিন্দু হাসারাঙ্গা