‘রান তাড়ায় ভালো করছি, সেই ধারায় থাকতে চাই,’ টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বললেন দাসুন শানাকা। অধিনায়ককে হতাশ করেননি শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে রান তাড়ায় রেকর্ড গড়া দলটি আফগানিস্তানকেও হারিয়ে দিল একইরকম আরেকটি রেকর্ড গড়ে।
এশিয়া কাপে সুপার ফোর পর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার প্রতিপক্ষের দেওয়া ১৭৬ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ৫ বল বাকি থাকতে।
টি-টোয়েন্টিতে ১৭০ রানের বেশি করে এই প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেল আফগানিস্তান।
গ্রুপ পর্বে আফগানদের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা। এবারের দারুণ জয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিল দাসুন শানাকার দল।
সুপার ফোরে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে বৃহস্পতিবার দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৮৪ রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে এবার তারা পেল আরেকটি জয়ের উষ্ণ ছোঁয়া। সঙ্গে শারজাহতেও গড়ল নতুন রান তাড়ার রেকর্ড।
এই মাঠে আগের রেকর্ডও ছিল শ্রীলঙ্কার। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৭১ রান ৫ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে পেরিয়ে গিয়েছিল তারা।
লঙ্কানদের এবারের জয়ে ব্যাট হাতে টুকটাক অবদান রাখেন সবাই। ত্রিশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন চার জন; পাথুম নিসানকা, কুসল মেন্ডিস, দানুশকা গুনাথিলাকা ও ভানুকা রাজাপাকসা।
ম্যাচের প্রথমভাবে অবশ্য সব আলো কেড়ে নেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। খুনে ব্যাটিংয়ে ৬টি ছক্কা ও ৪টি চারে ৪৫ বলে ৮৪ রান করেন তিনি। দল হারলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আফগান ওপেনারই।
গুরবাজকে অবশ্য তৃতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরাতে পারত শ্রীলঙ্কা। মাহিশ থিকশানাকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলেই আবারও ছক্কার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে ঠিক মতো করতে পারেননি ব্যাটসম্যান। বাউন্ডারিতে ক্যাচও ধরেন গুনাথিলাকা। কিন্তু ফিল্ডারের পা লেগে যায় বাউন্ডারি লাইনে। বেঁচে যান আফগান ওপেনার, পেয়ে যান ছক্কাও।
আরেক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই যেতে পারেননি বেশিদূর। ৮ রানে জীবন পেয়ে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন গুরবাজ। আসিথা ফার্নান্দোর ওভারে মারেন একটি করে চার-ছক্কা। মাদুশাঙ্কাকে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।
২০ বছর বয়সী গুরবাজ ফিফটি স্পর্শ করেন ২২ বলে। আফগানদের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে যা দ্বিতীয় দ্রুততম পঞ্চাশ। ২০১৭ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ বলে অর্ধশত করে রেকর্ড গড়েছিলেন মোহাম্মদ নবি।
গুরবাজকে দারুণ সঙ্গ দেন ইব্রাহিম জাদরান। জমে ওঠে তাদের জুটি। দাসুন শানাকাকে একটি করে চার ও ছক্কা মারেন গুরবাজ। পরে চামিকা করুনারত্নেকে দুইজন মিলে মারেন একটি করে ছক্কা।
আসিথার বলে গুরবাজের বিদায়ে ভাঙে ৬৪ বল স্থায়ী ৯৩ রানের জুটি। ছক্কার চেষ্টায় মিডউইকেটে ধরা পড়েন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। এক ওভার পর ফেরেন ১ ছক্কা ও ২ চারে ৪০ রান করা ইব্রাহিমও।
মাদুশাঙ্কার ওই ওভারে টানা ছক্কা-চার মারেন নাজিবউল্লাহ জাদরান। থিকশানাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নবি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো নাজিবউল্লাহ হন রান আউট। শেষ ২৪ বলে আফগানিস্তান করতে পারে ৩০ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেয় শ্রীলঙ্কা। মেন্ডিস ও নিসানকার নৈপুণ্যে পাওয়ার প্লেতে ৫৭ রান তুলে ফেলে তারা।
গ্রুপ পর্বের দেখায় শুরুতে লঙ্কানদের ব্যাটিং নাড়িয়ে দেওয়া ফজল হক ফারুকিকে এদিন প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন নিসানকা, যদিও সেটা ছিল ইনসাইড এজে। এই পেসারের পরের ওভারে চার মারেন আরও দুটি।
মুজিব উর রহমানকে ছক্কায় ওড়ান মেন্ডিস। পরে রশিদ খানকে মারেন তিনি টানা দুটি ছক্কা। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ১৯ বলে ৩৬ রান করা মেন্ডিসের বিদায়ে সপ্তম ওভারে ভাঙে তাদের ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ রান করা নিসানকাকে ফেরান মুজিব। চারিথ আসালাঙ্কাকে বোল্ড করে দেন নবি। শানাকা এদিন টানতে পারেননি দলকে।
তবে দলকে পেছনে পড়তে দেননি রাজাপাকসা। ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলেন তিনি। নাভিন উল হককে মারেন টানা দুটি চার একটি ছক্কা। ওই ওভারে তার ক্যাচ ছাড়েন সামিউল্লাহ শিনওয়ারি।
আরেক প্রান্তে থাকা গুনাথিলাকাও বাড়াতে থাকেন রান। দুটি করে ছক্কা-চারে ২০ বলে ৩৩ রান করে রশিদের বলে বোল্ড হন তিনি। ১৪ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৩১ রানের ক্যামিও খেলে যখন মাঠ ছাড়েন রাজাপাকসা তখন জয়ের খুব কাছে শ্রীলঙ্কা।
শেষ দিকে ৩ চারে হাসারাঙ্গা খেলেন ৯ বলে ১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। চামিকা করুনারত্নের চারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা।
আগামী মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে খেলবে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানের ম্যাচ পরদিন, পাকিস্তানের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৫/৬ (জাজাই ১৩, গুরবাজ ৮৪, ইব্রাহিম ৪০, নাজিবউল্লাহ ১৭, নবি ১, রশিদ ৯, জানাত ০*; থিকশানা ৪-০-২৯-১, আসিথা ৪-০-৩৪-১, মাদুশাঙ্কা ৪-০-৩৭-২, হাসারাঙ্গা ৪-০-২৩-০, করুনারত্নে ২-০-২৯-০, শানাকা ২-০-২২-০)
শ্রীলঙ্কা: ১৯.১ ওভারে ১৭৯/৬ (নিসানকা ৩৫, মেন্ডিস ৩৬, আসালাঙ্কা ৮, গুনাথিলাকা ৩৩, শানাকা ১০, রাজাপাকসা ৩১, হাসারাঙ্গা ১৬*, করুনারত্নে ৫*; ফারুকি ৩.১-০-৩৪-০, মুজিব ৪-০-৩০-২, নাভিন ৪-০-৪০-২, রশিদ ৪-০-৩৯-১, নবি ৪-০-৩৪-১)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ