Can't found in the image content. ডমিঙ্গোর বাংলাদেশ-অধ্যায় কি তাহলে শেষ? | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

ডমিঙ্গোর বাংলাদেশ-অধ্যায় কি তাহলে শেষ?

স্পোর্টস ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ২০, ২০২২

ডমিঙ্গোর বাংলাদেশ-অধ্যায় কি তাহলে শেষ?

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিবর্তনের হাওয়া বেশ জোরেশোরেই বইছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপের আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির ভাবনা অনেকটা খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার মতো। এর মধ্যেই দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় কোচ শ্রীধরন শ্রীরামকে। বিসিবির সঙ্গে তাঁর চুক্তি অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। আগামীকাল তাঁর ঢাকায় আসার কথা। আলোচনা হচ্ছে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সকে জাতীয় দলে না রেখে পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ারও।

কোচিং স্টাফের এত অদলবদলের ভিড়ে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, সেটা নিয়েও বাড়ছে কৌতূহল। কাল বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদে বিসিবির পরিকল্পনা সংস্করণ ধরে কোচ নিয়োগের। সে ক্ষেত্রে ডমিঙ্গোকে বিসিবি ওয়ানডে ও টেস্ট দলের কোচ হিসেবে চায়। অতিরিক্ত ক্রিকেটের চাপ এর পেছনে মূল কারণ বলা হচ্ছে। এর বাইরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোচ হিসেবে ডমিঙ্গোর মানসিকতাও নাকি বিসিবির পছন্দ হচ্ছে না।

তবে বিসিবির নতুন ভাবনা ডমিঙ্গোর পছন্দ হওয়ার কথা নয়। জিম্বাবুয়ে সফরের পর এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে গতকাল তিনি বাংলাদেশে ফিরেছেন। বিসিবির সঙ্গে ২২ আগস্ট ডমিঙ্গোর বৈঠক হওয়ার কথা। গুঞ্জন আছে, সেই বৈঠকই হতে পারে বিসিবির সঙ্গে ডমিঙ্গোর শেষ বৈঠক। কোচিং স্টাফ নিয়ে বিসিবি যে পথে হাঁটতে চাইছে, ডমিঙ্গো হয়তো সেই পরিকল্পনায় না থেকে বিদায়ই বলে দেবেন। এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন না বলে কয়েক দিনের মধ্যেই ডমিঙ্গোর আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে আবার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা কমই বলে শোনা যাচ্ছে। 

শুধু কোচিং স্টাফ নয়, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকাণ্ডেও নাকি অনেক দিন ধরেই ডমিঙ্গো হতাশ। এসবের শুরু জিম্বাবুয়ের হারারে থেকে। ২০২১ সালের জিম্বাবুয়ে সফরের একমাত্র টেস্টে একাদশে না রাখার কারণে ডমিঙ্গোর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন এক ক্রিকেটার। ডমিঙ্গো বিসিবি বরাবর এ নিয়ে অভিযোগও করেন। কিন্তু বিসিবি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ডমিঙ্গোর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার শুরু সেখান থেকেই।

এবার জিম্বাবুয়ে সফরে বিসিবির আরেক কাণ্ড ডমিঙ্গোকে যেন আরও খোলসবন্দী করে দেয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহকে দলে চাননি তিনি। চোটের কারণে নুরুল হাসান ছিটকে গেলেও তরুণদের নিয়েই খেলতে চেয়েছিলেন সিরিজের শেষ ম্যাচটি। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা সিদ্ধান্ত ছিল মাহমুদউল্লাহকে খেলানোর পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ডমিঙ্গোর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ, যা প্রধান কোচের জন্য ছিল আরও একটি বড় ধাক্কা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পর ডমিঙ্গোর হতাশা ছিল চূড়ান্তে। যে দলে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, সেই দল নিয়ে তিনি নাকি কথাও বলতে চান না। বিসিবির একটি সূত্র এ ব্যাপারে বলছিলেন, ‘(বোর্ড) আমাদের তো কিছু করতে দেয়ই না। বাইরের কেউ (ডমিঙ্গো) এসে যদি কিছু করতে চায়, তাদেরও কিছু করতে দেয় না।’

জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর ডমিঙ্গো ও তাঁর ম্যানেজমেন্টের কড়া সমালোচনা করেছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। কোচিং স্টাফের সদস্যরা আগ্রাসী মানসিকতার নয় বলে সরাসরি অভিযোগ ছিল তাঁর। ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে অনুপ্রাণিত করতে নাকি কোচরাই ব্যর্থ। আক্রমণাত্মক কোচ বোঝাতে তিনি বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের উদাহরণও টেনেছেন।

বোর্ডের জাঁতাকল তো আছেই। সঙ্গে ডমিঙ্গোকে নাকি কখনো কখনো মানিয়ে চলতে হয় দলের কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদেরও। এমন ঘটনাও আছে, এসব কারণে বিসিবির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেননি বাংলাদেশ সাবেক এক কোচ। দুই বছর কাজ করে তিনি বুঝে গিয়েছেন যে এখানে নিজের কাজটা স্বাধীনভাবে করতে পারবেন না। তাই বিদায় বলে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সেই কোচ। বাংলাদেশে কোচিং করানো যায় না, এটাই ছিল সেই সাবেক কোচের অভিযোগ। অথচ তাঁর বিদায়ে বাংলাদেশ দলের বিশাল ক্ষতি হয়েছে বলেই মনে করেন জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের একাংশ। বিদেশি কোচের বিদায়বেলায় ক্রিকেটারের কেঁদে ফেলার ঘটনা খুব কমই ঘটে। সেই কোচের বিদায়ে অনেকেই অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি।

ডমিঙ্গো এত দিন সেই পথে এগোননি। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে তাঁর চুক্তি। হয়তো এ সময়টা তাল মিলিয়ে কাটিয়ে দেওয়ারই পরিকল্পনা ছিল ডমিঙ্গোর। কিন্তু গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বদলে যাওয়া হাওয়ায় যেন এখন আর দম নিতে পারছেন না এই দক্ষিণ আফ্রিকান। এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারলেই রক্ষা।