সামনে দুর্গাপূজা, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশ নেই। থাকবে কী করে? বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ, দূষণের কারণে মাছ নেই গঙ্গায়ও। মিয়ানমার থেকে যা একটু আমদানি হয়েছিল, তাতে তৃপ্তি মেটেনি। পদ্মার ইলিশের সঙ্গে কি আর অন্য কিছুর তুলনা চলে? এ প্রশ্নের জবাবে হয়তো আপনি সরাসরি ‘না’ বলে দেবেন, তবে পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা কিন্তু ‘হ্যাঁ’ ও বলতে পারেন। কারণ, তাদের রয়েছে বোরোলি নামে একটি মাছ। হ্যাঁ, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটিই সত্য! বোরোলি খেয়েই ইলিশের স্বাদ ভুলতে চাচ্ছেন ওপার বাংলার লোকেরা। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজ তাকের বাংলা সংস্করণে এমনটাই জানানো হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিশ বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মাছ, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু, অনেকেই মনে করেন, ইলিশকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আরও অনেক মাছের। শুধু প্রচারের অভাবেই সেগুলো বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারছে না।
আজ তাকের দাবি, ইলিশের স্বাদকে চ্যালেঞ্জ জানানো এমনই একটি মাছ বোরোলি, যাকে অনেকেই ‘উত্তরের ইলিশ’ও বলে থাকেন। আকারে ইলিশের সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনা চলে না বোরোলির, তবে স্বাদে ঠিকই মানুষকে মোহিত করতে পারে ছোট্ট মাছটি।
বলা হয়েছে, উত্তরের অভয়ারণ্য, কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তার মতোই জনপ্রিয় রুপালি শস্য ‘বোরোলি’। ভালেঅবেসে কেউ কেউ একে ‘তিস্তার ইলিশ’ বলেও ডাকেন। আকারে খুব বেশি হলে তিন থেকে চার ইঞ্চি, কিন্তু তাতেই স্বাদে মাতোয়ারা বঙ্গবাসী।
বোরোলি তিস্তায় বেশি পাওয়া গেলেও তোরষা, করলা, রায়ডাক, বালাসন, কালজানিতেও এর দেখা মেলে। তবে স্বাদের বিচারে নাকি তিস্তার বোরোলিই সেরা। কম যায় না তোরষার মাছও।
আজ তাকের তথ্যমতে, বিখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, উত্তরবঙ্গ বলতেই তার বোরোলির কথা মনে পড়ে। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও বোরোলি-ভক্ত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী উত্তরবঙ্গ সফরে গেলে ওই মাছ তার চাই-ই চাই। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পাতেও বোরোলি না দিলে হতো না।
তবে বোরোলি নিয়ে খুশির পাশাপাশি আশঙ্কাও দানা বেঁধেছে ভারতীয়দের মনে। সেখানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক হারে চলছে মাছ শিকার। তবে জেলেদের বক্তব্য, দূষণের কারণেই বোরোলি কমে যাচ্ছে। নদীর টলটলে পরিষ্কার প্রবাহমান পানি ছাড়া বোরোলি বাঁচে না। কিন্তু উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলোতে কীটনাশক ব্যবহার বেড়েছে, তা মিশছে নদীর পানিতে। তাই নদীর দূষণও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বোরোলির অক্সিজেন বেশি লাগে। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর পানিতে সেই অক্সিজেন পায় তারা। এ কারণে শুধু ওই ধরনের নদীতেই বোরোলির দেখা মেলে। কিন্তু তিস্তায় বাঁধ দেওয়ায় স্রোত কমে গেছে, তাতে কমেছে বোরোলিও। তোরষা নদীতে বাঁধ না থাকায় তুলনামূলকভাবে বোরোলি সেখানেই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
আজ তাকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উত্তরবঙ্গের নদীগুলোতে বোরোলি ফেরাতে নানা বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মৎস্যপ্রেমীরা সেগুলো খেয়ে বলছেন, এটি অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো ব্যাপার। মাছগুলো বোরোলি বটে, তবে স্বাদে আসলটির ধারেকাছেও নেই।
তাই তো প্রশ্নও উঠছে, যেখানে আসল বোরোলির স্বাদই পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে পদ্মার জগৎবিখ্যাত ইলিশের সঙ্গে তার তুলনা চলে কীভাবে?