নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্থবির হয়ে থাকা আর কতদিন। সংস্কারের সাহসটা তাই দেখিয়েছে বিসিবি, প্রায় পনেরো বছর ধরে যাঁরা খেলে আসছেন, সেই মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দিয়ে গড়া হয়েছে টি২০ দল। নবযাত্রার চ্যালেঞ্জটাও নিয়েছেন নুরুল হাসান সোহানও।
আজ সোহানের সেই 'নতুন' দলের প্রথম ম্যাচ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। হারারেতে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি২০তে মাঠে নামছে টাইগাররা। নতুনের এই আহ্বান এবং তাঁকে স্বাগত জানাতে উদগ্রীব সমর্থকরাও।
শেষ ১৩ ম্যাচের একটিতে মাত্র জয় নিয়ে যে দল হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেই দলকে জয়ের ধারায় নিয়ে আসার প্রথম চ্যালেঞ্জ সোহানদের। যদিও বিসিবি থেকে নতুন এই দলের কাছে প্রত্যাশার চাপ দেওয়া হয়নি, শুধু টি২০টা টি২০'র মতোই খেলতে বলা হয়েছে। 'ছেলেদের বলা হয়েছে এই সিরিজে ফলাফল নিয়ে ভাবার দরকার নেই। ৩-০তে হারলেও কোনো চাপ নেই। তোমাদের থেকে শুরু টি২০ খেলাটা দেখতে চাই।' দলের সঙ্গে থাকা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন এভাবেই সাহস জুগিয়ে চলেছেন সোহানদের।
কিন্তু সোহানের নিশ্চয় জানা আছে যে, শেষ পর্যন্ত সিরিজ কিংবা ম্যাচের রেজাল্ট নিয়েই কাটাছেঁড়া হবে। কিছু সমালোচক যাঁরা কিনা সিনিয়রদের বাদ দেওয়াটা পছন্দ করেননি, তাঁরা অপেক্ষায় থাকবেন 'ভুল ধরার'। তাই মাঠের পরীক্ষাতে সফল হতেই হবে সোহান এবং তাঁর নতুন দলের। এমনিতে জিম্বাবুয়ে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পছন্দের প্রতিপক্ষ। ঘরে কিংবা বাইরে আফ্রিকার এই দলটির সঙ্গে দাপটের সঙ্গেই খেলে থাকে টাইগাররা। গত বছরও এই হারারেতে গিয়ে ২-১ টি২০ সিরিজ জিতে এসেছিল বাংলাদেশ।
বেশ কয়েক বছর ধরেই জিম্বাবুয়ে দলে ভাঙাগড়া চলছে। তবে এবার এই দলটি বেশ গুছিয়ে নামছে। দুই সপ্তাহ আগেই তারা এবারের টি২০ বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে, চার বছর বাদে আইসিসির কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়ে উজ্জীবিত দলটি। তবে চোটের কারণে নেই দলের দুই মূল পেসার টেন্ডাই চাতারা আর ব্লেসিং মুজারাবানি।
ব্যাটিংয়ে পূর্ণশক্তির দলই রয়েছে জিম্বাবুয়ের। দলের প্রধান পাঁচ ব্যাটারের চারজনেরই স্ট্রাইকরেট ১২৬ থেকে ১৫০-এর মধ্যে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিকান্দার রাজা, ওয়েসলি মাদেভেরা, শেন উইলিয়ামস ও রেগিস চাকাভা। তাদের প্রত্যেকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের টুর্নামেন্টে ফর্মে ছিলেন। আজকের ম্যাচে এই ব্যাটারদের থামানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে মুস্তাফিজ-মিরাজদের।
পরিসংখ্যান বলছে, আজ যে মাঠে খেলা হবে, সেখানে গত এক বছরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা দল গড়ে ১৬০ রান করেছে। এটা ধরে নিলে আজকের ম্যাচেও এর আশপাশের রান হলেই সে দল এগিয়ে থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা দিতে হবে সোহানের দলের টপঅর্ডার ব্যাটারদেরই।
দলে পারভেজ ইমন একেবারেই নতুন মুখ, তাঁর সঙ্গে মুনিম শাহরিয়ার রয়েছেন। তাদের দু'জনকেই শটস খেলার ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া আছে। তবে ওপেনিংয়ে কোন জুটিকে নিয়ে পরীক্ষা করাবেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, তা এখনও পরিস্কার হয়নি। লিটন দাস আর পারভেজ হোসেন ইমনকে দিয়ে ইনিংসের শুরু করাতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
বাংলাদেশের প্রথাগত যে ডানহাতি-বামহাতি নিয়ম চালু আছে, তাতে লিটন-ইমনের জুটিতে মিলে যায়। তিন নম্বরে দেখা যেতে পারে এনামুল হক বিজয়কে। চারে নাজমুল হোসেন শান্ত। এরপর আফিফ, সোহান, মোসাদ্দেক, মিরাজকে দিয়ে সাজানো থাকবে ব্যাটিং অর্ডার।
বোলিংয়ে মুস্তাফিজকেই লিড দিতে হবে, তাঁর সঙ্গে পেসার থাকতে পারেন শরিফুল ইসলাম। স্পিনে নাসুম আহমেদ থাকছেনই। গতকাল হারারে থেকে একাদশ সাজানোর এমনই ইঙ্গিত মিলেছে।
আর দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক সোহানও ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন তাঁরা ভয়ডরহীন ক্রিকেটই খেলবেন। তাঁদের সেই সাহসী ক্রিকেট দেখারই অপেক্ষায় থাকবে আজ বাংলাদেশ।