বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি বেঁধে রান আনছিলেন দ্রুত। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে ম্যাচ। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আধা ঘণ্টা আগে হঠাৎই পাল্টে গেল চিত্র। ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা দেখাতে শুরু করলেন ঘূর্ণি জাদু। সেই ধারা জারি থাকায় দ্বিতীয় সেশনেই কুপোকাত হলো পাকিস্তান। প্রবাথ জয়সুরিয়া ও রমেশ মেন্ডিসের তোপে শেষ ৭ উইকেট তারা হারাল মাত্র ৮৫ রানে। ২৪৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সমতায় ফিরল স্বাগতিক লঙ্কানরা।
বৃহস্পতিবার গলে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ৫০৮ রানের রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ায় ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। চতুর্থ দিনের ১ উইকেটে ৮৯ রান নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা গুটিয়ে গেছে ২৬১ রানে। ফলে সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত আগের টেস্টে ৩৪২ রান তাড়া করে জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাবরের দল।
পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে অফ স্পিনার রমেশ ৫ ও বাঁহাতি স্পিনার প্রবাথ ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাদের বিপরীতে খাবি খেয়েছে সফরকারীরা। ক্যারিয়ারের শুরুতেই সাড়া ফেলে দেওয়া ৩০ বছর বয়সী প্রবাথ ১১৭ রানে নেন ৫ উইকেট। এখন পর্যন্ত ৩ টেস্ট খেলে তার শিকার ২৯ উইকেট। ৪ উইকেট নিতে রমেশের খরচা ১০১ রান।
ম্যাচসেরার পুরস্কার অবশ্য উঠেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে। দ্বিতীয় ইনিংসে সাতে নেমে ১০৯ রানের ইনিংস খেলে লঙ্কানদের বিশাল লিড পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ম্যাচে দুটি ফলের যেকোনো একটি আসার জোরালো সম্ভাবনা ছিল। হয়তো শ্রীলঙ্কা জিতে যাবে, নয়তো পাকিস্তান সারাদিন ব্যাট করে ড্র ছিনিয়ে নেবে। প্রবাথ ও রমেশের নৈপুণ্যে প্রথমটিই রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
তৃতীয় একটি সম্ভাবনা থাকলেও সেটার পক্ষে বাজি ধরা ছিল কঠিন। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটের বৈশিষ্ট্য অনুসারে, শেষদিনে আরও ৪১৯ রান তুলে পাকিস্তানের জয় তুলে নেওয়া ছিল অসম্ভবেরই পর্যায়ে। বাবর ও রিজওয়ানের জুটি ভাঙার পর বাকিরা আসা-যাওয়ার মাঝে থাকায় ন্যূনতম রোমাঞ্চও ছড়ায়নি।
দিনের তৃতীয় ওভারেই বিদায় নেন আগের দিন অপরাজিত থাকা ওপেনার ইমাম উল হক। কাট করতে গিয়ে রমেশের বলে উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলার তালুবন্দি হন তিনি। ৯০ বলে ৪৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ইমামের বিদায়ের পর বাবর সঙ্গী হিসেবে পান রিজওয়ানকে। তারা দলের সংগ্রহ বাড়াতে থাকে দ্রুত। প্রথম ঘণ্টাতেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফসেঞ্চুরিও পূর্ণ করে ফেলেন বাবর।
নির্বিঘ্নে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার কক্ষপথে যখন ছিল পাকিস্তান, তখনই আসে ধাক্কা। ৬ ওভারের মধ্যে তারা হারায় ৩ উইকেট। প্রবাথের বলের ভাষা পড়তে না পেরে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন রিজওয়ান। তাতে ভাঙে ১৪১ বলে ৭৯ রানের জুটি। রিজওয়ান করেন ৬৯ বলে ৩৭ রান। এরপর ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান ফাওয়াদ আলম। প্রবাথের বলেই শর্ট লেগে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে আগা সালমানকে ফেরান কুসল মেন্ডিস।
৫ উইকেটে ১৮৮ রান নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করা পাকিস্তান বাকি ৫ উইকেট হারায় চা বিরতির আগেই। শুরুটা বাবরকে দিয়ে। তার ১৪৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস থামে প্রবাথের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। রিভিউ নিলেও পাল্টায়নি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। মোহাম্মদ নওয়াজ বিদায় নেন রমেশের করা পরের ওভারে।
শেষদিকে হারের ব্যবধান কিছুটা কমান ইয়াসির শাহ। প্রবাথের পঞ্চম শিকার হওয়ার আগে ২৫ বলে ৬ চারে ২৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। হাসান আলির পর নাসিম শাহকেও ঝুলিতে পুরে ম্যাচের ইতি টানেন রমেশ।