ওপার বাংলা ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৮, ২০২২
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইতোমধ্যে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে দুজনেই রয়েছেন কলকাতায় ইডির সদর দফতর সিজিও কমপ্লেক্সের লকআপে। এই ঘটনায় পার্থ অর্পিতাকে জেরা করে একাধিক সম্পত্তির হদিস পান গোয়েন্দারা। বুধবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। কলকাতার বেলঘরিয়ায় অর্পিতার আরও একটি ফ্ল্যাট থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি রুপি ও ৩ কেজি সোনার বার উদ্ধার হয়েছে।
এদিন বেলা ১২টা নাগাদ কসবার রাজডাঙায় ‘ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি প্রযোজনা সংস্থার অফিসে হানা দেয় ইডির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, মন্ত্রীর বাড়িতে হানা দিয়ে ওই সংস্থার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল।
সূত্রের খবর, ওই সংস্থার কর্ণধার দুজন অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও তার জামাই কল্যাণ ধর এদিন ওই প্রোডাকশন হাউজের বিভিন্ন নথিপত্র খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দারা। অন্যদিকে, ৯৫, রাজডাঙা রোড নামক ঠিকানাটি নিজের বলে দাবি করেন এক স্থানীয় ব্যবসায়ী। প্রমাণ হিসেবে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে কলকাতা পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত ট্রেড লাইসেন্স দেখান। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, ভুয়া ঠিকানায় চলছিল ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্টের অফিস। এ নিয়ে স্থানীয় কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানান তিনি।
এর পাশাপাশি, এদিন বেলঘড়িয়ার রথতলা এলাকায় ক্লাব টাউন আবাসনে হানা দেয় ইডির চারজন গোয়েন্দা। কিন্তু ৯তলার ওই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ থাকায় প্রথমে তারা ফ্ল্যাটটিতে ঢুকতে পারেননি। এরপর ডুপ্লিকেট চাবি বানানোর জন্য ডেকে পাঠানো হয় এক চাবিওয়ালাকে। সেই চাবিওয়ালা এসে কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও ৮-এ ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবি বানাতে পারেননি। পরে তারা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে ইডি।
সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাটের ওয়ারড্রোব ভেঙে আরও বিপুল অংকের রুপির হদিস পান কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। তারপর আধ ঘণ্টার মধ্যে ইডির দুজন দুজন সিনিয়র কর্মকর্তা গিয়ে উপস্থিত হন ক্লাব টাউনের ওই ফ্ল্যাটে। উদ্ধার হওয়া রুপি গোনার জন্য ৩-৪ জন সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও রুপি গোনার মেশিন আনানো হয় ইডির তরফে। এরপর শুরু হয় রুপি গণনার কাজ। গ্রেফতার হওয়ার তিনদিন আগেও এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট আবাসনে মডেল-অভিনেত্রীর নামে আরও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অন্যদিকে বেলঘরিয়ার আব্দুল লতিফ স্পিডে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পৈত্রিক বাড়িতেও হানা দেয় ইডি। সেই বাড়ির দোতলার ঘরে একাই থাকেন অর্পিতার মা মিনতি মুখোপাধ্যায়। এদিন সকালে ইডি কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে পৌঁছানোর পর মিনতি দেবী প্রথমে তাদের ঢুকতে বাধা দেন। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন। বালিগঞ্জ প্লেস ইস্টের একটি ফ্ল্যাটে এদিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ হানা দেন ইডির আটজন কর্মকর্তা।
সূত্রের খবর, এই ফ্ল্যাটের আলমারির ভিতর একাধিক লকার পাওয়া গেছে। সেই লকারগুলো খোলার জন্য চাবিওয়ালাকে ডেকে পাঠানো হয়। ৪৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তিনি ডুপ্লিকেট চাবি বানানোর কাজ করে চলেছেন। সেই লকারগুলো থেকে কী পাওয়া যায়, সেটাই দেখার।
অন্যদিকে বেলঘড়িয়ার রথতলা এলাকায় ক্লাব টাউন আবাসনের ৮-এ ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ রুপি। সেই টাকা গোনার জন্য ৪ জন সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও রুপি গোনার ৫টি মেশিন আনানো হচ্ছে। এমনটাই খবর ইডি সূত্রে।
এর আগে শুক্রবার কলকাতার একটি অভিজাত এলাকায় অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি রুপি ও গয়না, বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে ইডি।