আগেই হারটা নিশ্চিতই ছিল। বাংলাদেশের ভাগ্য তৃতীয় দিন শেষেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ছিল ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কাও। কিন্তু স্বস্তি একটাই, ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।
নুরুল হাসান সোহানের সাহসী ব্যাটিংয়ে ইনিংস হার এড়িয়ে ১২ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ রানের। এই লক্ষ্য পেরোতে মাত্র ১৭ বল লেগেছে ক্যারিবীয়দের। ক্রেইগ ব্রেথওয়েট ৪ আর জন ক্যাম্পবেল ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
সেন্ট লুসিয়া টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। অ্যান্টিগায় প্রথম টেস্টে স্বাগতিকরা জিতেছিল ৭ উইকেটে। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
ভেজা মাঠ অনেকটা সময় বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশের হার। চতুর্থ দিনের প্রথম দুই সেশনে আউটফিল্ড প্রস্তুতই করতে পারেননি মাঠকর্মীরা। অবশেষে চা-বিরতির পর খেলা শুরু হয়।
মেহেদি হাসান মিরাজ দিনের চতুর্থ ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন ৪ রান করে। ইনিংস হার এড়াতে তখনও ২৬ রান দরকার বাংলাদেশের। শঙ্কা ছিলই। তবে নুরুল হাসান সোহান সেই শঙ্কা দূর করে দিয়েছেন।
টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলে দলকে বাঁচিয়েছেন ইনিংস হারের লজ্জা থেকে। ৪০ বলে ঝড়ো তার ফিফটি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বোর্ডে লিডও যোগ হয়। যদিও সেটা খুব বড় হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়বার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে নামানো গেছে।
এবাদত-শরিফুল শূন্য রানে ফিরলে স্ট্রাইক নিয়ে ইনিংস হার এড়ান সোহান। আলজেরি জোসেফের এক ওভারে টানা দুই বলে চার আর ছক্কা হাঁকিয়ে লিড ১০ রান পার করেন তিনি। শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদ রানআউট হলে ১৮৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
৫০ বলে ৬ চার আর ২ ছক্কায় সোহান সঙ্গীর অভাবে অপরাজিত থেকে যান ৬০ রানে। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি, সব কটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয় বোলারদের মধ্যে ৩টি করে উইকেট নেন কেমার রোচ, আলজেরি জোসেফ আর জেডেন সিলস।
তৃতীয় দিন শেষেই সেন্ট লুসিয়া টেস্টে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল সাকিব আল হাসানের দল। লক্ষ্য ছিল একটাই, কোনোমতে ইনিংস হারটা এড়ানো যায় কি না। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ইনিংস পরাজয় এড়াতে আরও ৪২ রান করতে হতো সফরকারীদের।
ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৩২ রান। প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসানের দল গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানে। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৮ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে নেয় ১৭৪ রানের লিড।
১৭৪ রান পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার পর তামিমদের কাছ থেকে যেটুকু ধৈর্য আশা করেছিল সবাই, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বরং কেমার রোচের ইনসুইংগার-আউটসুইংগার বাছবিচার না করে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি।
মাত্র ৮ বল খেলে ৪ রান করে দলীয় ৪ রানের মাথায় উইকেট বিলিয়ে দেন তামিম। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মাহমুদুল হাসান জয়। কয়েকটি ভালো শট, কয়েকটি আলগা শটও খেলেন তিনি। রোচকে ৭ম ওভারের দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই তার ইনসুইংগার বলটিকে ঠেকাতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বসেন।
বল চলে যায় থার্ডম্যানে জার্মেই ব্ল্যাকউডের হাতে। ১৩ রান করে আউট হয়ে যান জয়। দলীয় ৩২ রানের মাথায় কেমার রোচের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন এনামুল হক বিজয়। তার দুর্দান্ত ডেলিভারিতে হলেন এলবিডব্লিউ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি আট বছর টেস্টে ফেরা বিজয়।
মাত্র ৪ রান করে আউট হন বিজয়। তিনি আউট হতে না হতেই নামে বৃষ্টি এবং খেলা বন্ধ হয়ে যায় এ সময়। বৃষ্টি থামার পর খেলা শুরু হলেও বদলায়নি বাংলাদেশের ভাগ্য। একপ্রান্তে নাজমুল শান্ত আশা দেখালেও হতাশ করেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসরা।
বছরের শুরু থেকে দারুণ ফর্মে থাকা লিটন সাজঘরে ফিরে যান ১৬ রান করে, সাকিব থামেন ব্যক্তিগত ১৯ রানে। দারুণ খেলতে থেকে ফিফটি আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত আলগা শটে আউট হন ৪২ রান করা শান্ত। ১১৮ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর মিশনে ব্যাটিং শুরু করেন নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। সোহান ১৬ রান আর মিরাজ শূন্যতে অপরাজিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ইনিংস হার এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ, তবে এড়াতে পারেনি টেস্ট হার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৪/১০ (লিটন দাস ৫৩, তামিম ইকবাল ৪৬, নাজমুল শান্ত ২৬, শরিফুল ইসলাম ২৬, এনামুল হক ২৩; আলজেরি জোসেফ ৩/৫০, জেডেন সিলস ৩/৫৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪০৮/১০ (কাইল মায়ার্স ১৪৬, ক্রেইগ ব্রেথওয়েট ৫১; খালেদ আহমেদ ৫/১০৬, মেহেদি মিরাজ ৩/৯১)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৮৬/১০ (নুরুল হাসান সোহান ৬০*, নাজমুল শান্ত ৪২; জেডেন সিলস ৩/২১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৩/০ (ক্রেইগ ব্রেথওয়েট ৪*, জন ক্যাম্পবেল ৯*)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ী।