সময়ের বিচারে আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। এ বার জঙ্গলমহল সফরে বেরিয়ে সেই ভোটেরই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামের কর্মিসভায় তাঁর বার্তা, দ্রুত কাজ করতে হবে। এক বার ভোট ঘোষণা হয়ে গেলে সেই সব কাজকর্মের সুযোগ আর মিলবে না।
এতে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, সময় বলতে ঠিক একটি বছর। আগামী বছর মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট ধরে প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। সেই প্রক্রিয়া আরও গতি পাবে সেপ্টেম্বর নাগাদ। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে ব্যালটেই পঞ্চায়েত ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি।
ভোট বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভোটার তালিকা ছাড়া ভোট প্রস্তুতির মূল কাজ ‘ডিলিমিটেশন’ বা ভোট এলাকার পুনর্বিন্যাস এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত। তার আগে ভোটের ‘ম্যানুয়াল’ বা নিয়মাবলি, ভোট সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য টেন্ডার বা দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরবরাহকারী সংস্থা নির্বাচন এবং অন্যান্য প্রস্তুতি চলে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতে এই সব কাজ শুরু হতে বিলম্ব হবে না। বাকি নির্ভর করবে ভোটের সূচি নিয়ে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে।
মনে করা হচ্ছে, আগামী বছর মে মাসে পঞ্চায়েত ভোটের সূচির বদল হলে তার সমান্তরালে প্রস্তুতির সময়ও এগিয়ে আসতে পারে। পঞ্চায়েত দফতর ভোটের প্রস্তাব দেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার এবং শাসক দলের সর্বোচ্চ মহল। সরকারের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন সারা বছরই কোনও না-কোনও ভোটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে। আগামী জুনে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং জিটিএ-র ভোট হওয়ার কথা। এখন তারই প্রস্তুতি চলছে। সেই পর্ব মিটে গেলেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু হবে। সংশোধিত ভোটার তালিকা তৈরিই আছে। তাই সেটির থেকে বেশি গুরুত্ব পাবে বাকি সব প্রক্রিয়া।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এখন থেকেই পুলিশকে সতর্ক করতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা সফরে প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি কর্মিসভা করে দলীয় কর্মীদের ভোট প্রস্তুতির বার্তা দিচ্ছেন। ভোটের হিংসায় লাগাম পরাতে জেলা পরিষদের দরপত্র সংক্রান্ত ক্ষমতাতেও রাশ টানা হয়েছে। গ্রামীণ কাজকর্মের অনেকটাই কেন্দ্রীভূত হয়েছে পঞ্চায়েত দফতরের হাতে।
গত পুরভোটের পুরোটাই হয়েছিল ইভিএমে। তবে সূত্রের খবর, এ বারের পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে ব্যালটেই। আধিকারিক মহলের বক্তব্য, ইভিএমে ভোট করাতে হলে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি চালাতে হত। আগামী বছর মে মাসে ভোট হলে এখন সেই প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা কার্যত কঠিন। এক কর্তার কথায়, “এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যালটে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেলে ব্যালট বাক্স সংগ্রহ, ব্যালটের কাগজ ছাপানোর কাজও শুরু হবে।”