তাইজুল ইসলামের ছয় উইকেটের পরও প্রথম ইনিংসে ৪৫৩ রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দেখিয়ে দিয়েছে সেন্ট জর্জেস পার্কের উইকেট কতটা ব্যাটিংবান্ধব। সেই উইকেটেই আত্মঘাতী ব্যাটিংয়ে শনিবার পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয়দিন শেষে মহাবিপদে বাংলাদেশ। পাঁচ উইকেটে ১৩৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। এখনো পিছিয়ে তারা ৩১৪ রানে। শুধু ফলো-অন এড়াতেই আরও দরকার ১১৫ রান। মুশফিকুর রহিম ৩০ ও ইয়াসির আলী অপরাজিত আট রানে। ক্রিজে নামার সময় বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেন ধৈর্য নামের বস্তুটা সাজঘরে রেখে আসেন। যার আদর্শ উদাহরণ হতে পারেন তামিম ইকবাল। প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলতে নামা তামিম ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে আসেন। ৫৭ বলে করেন ৪৭ রান। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসানকে প্রথম ওভারেই শূন্য রানে ফিরিয়েছিলেন ডুয়ানে অলিভিয়ের। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৯ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা অনেকটাই সামাল দিয়েছিলেন তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৩৩)। কিন্তু শেষ বিকালে উইয়ান মুলডারের মিডিয়াম পেসে ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। শুরুটা তামিমকে দিয়ে। অফ-স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা বল অকারণে অনসাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তামিম। পরের ওভারে একই কৌশলে নাজমুলকে ফেরান মুলডার। একটু পর অধিনায়ক মুমিনুল হককেও এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১২২ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসাবে বিদায় নেন লিটন দাস। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করেন অলিভিয়ের। ব্যাটিংয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ফলো-অন এড়ানো খুব কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য।
২৭৮/৫-এ দ্বিতীয়দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা লাঞ্চে যায় সাত উইকেটে ৩৮৪ রান স্কোর বোর্ডে জমা করে। দ্বিতীয়দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশ দুটি উইকেট পেলেও মহারাজের ফিফটি স্বাগতিকদের ৪০০-র কাছাকাছি নিয়ে যায়। দিনের শুরুতে খালেদ আহমেদের সঙ্গে ভেরেইনের কথা কাটাকাটি খানিকটা উত্তেজনা ছড়ায়। পরে ভেরেইনের (২২) মিডল স্টাম্প ছিটকে দেন খালেদই। প্রথমদিনের মতো কালও বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন এই ডান-হাতি পেসার।
এদিন প্রথম সেশনে প্রোটিয়ারা দুই উইকেট হারিয়ে ১০৬ রান যোগ করে। এর মধ্যে মহারাজ তুলে নেন টেস্টে নিজের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। উইয়ান মুলডার (৩৩) তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন। এ দুজন সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৮৪ রান। লাঞ্চের আগে ৫৬ রানে অপরাজিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঁ-হাতি স্পিনার মহারাজ মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর বাইশ গজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বলা ভালো, তাকে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করতে বাধ্য করেন তাইজুল। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া মহারাজকে ৮৪ রানে থামান বাংলাদেশের বাঁ-হাতি অফ-স্পিনার। স্লগ সুইপ শট খেলতে গিয়ে মিস করেন প্রোটিয়া ব্যাটার। বল আঘাত করে মিডল স্টাম্পে। মহারাজের চমৎকার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ৯৫ বলের ইনিংসে নয়টি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকান মহারাজ। স্বাগতিকদের রেখে যান তিনি ৪১৮/৮-এ। মহারাজ সেঞ্চুরি মিস্ করলেও তাইজুল পেয়ে যান ইনিংসে নিজের পঞ্চম উইকেট। হারমারকে (২৯) আউট করার মধ্য দিয়ে তাইজুল নিজের ষষ্ঠ শিকার ধরেন। তৃতীয় আম্পায়ারের মাধ্যমে হারমারের নিশ্চিত আউট তাইজুলকে এনে দেয় তার ১৫০তম টেস্ট উইকেট। তাইজুলের ছয় উইকেট ছাড়াও খালেদ আহমেদ পান তিন উইকেট। শেষ ব্যাটার লিজার্ড উইলিয়ামসকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে ৪৫৩ রানে প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসের যবনিকাপাত টানেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
(স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)