রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে জলমগ্ন সাড়ে ৩ হাজার পরিবার সাপ আতংকের মধ্যে বসবাস করছে। দুই সপ্তাহ থেকে পদ্মার পানি বৃদ্ধির পর থেকে তারা আতংকে রয়েছে।
চৌমাদিয়া চরে চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে মমতাজ বেগমের। কোল জুড়ে দুটি সন্তান এসেছে। একটির বয়স আড়াই বছর ও আরেকটির বয়স এক বছর। দুই সন্তান নিয়ে আতংকে বসবাস করছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমার শয়ন ঘরে শনিবার দুপুরে একটি গোখরা সাপ উঠেছিল। আমার চিৎকারে বাড়ির অন্যরা এগিয়ে এসে সাপটি মারা হয়েছে। ফলে আমি দুটি সন্তান নিয়ে আতংকের মধ্যে বসবাস করছি।
দিয়ারকাদিরপুর চরের বৃদ্ধা মুঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে আমার বাড়িতে পরপর চারটি সাপ উঠে। এ সময় সাপ দেখতে পেয়ে চারটি সাপই মারা হয়েছে। সাপ চারটির মধ্যে দুটি গোখরা ও দুটি দুধরাজ।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন শেখ বলেন, আমার বাড়ির পাশে এক বাড়িতে সোমবার সন্ধ্যায় দুটি সাপ উঠেছিল। সাপ দুটি তারা মারতে পারেনি। তবে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাপ আতংকে রয়েছে ১৫টি চরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার।
এ বিষয়ে লক্ষীনগর চরের সারমিন আক্তার আছিয়া বলেন, স্বামীসহ দুই সন্তানকে নিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে হাঁটু পানিতে বসবাস করছি। কখন যে সাপ আসে সেই আতংকে সারারাত ঘুমাতে পারি না। সাপের কামড় এড়াতে বা কামড় দিলে কী করণীয়, সেটাও ঠিকমতো জানি না।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, ফারাক্কার গ্রেট ঘুলে দেওয়ায় কারণে পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরের প্রতিটি বাড়িতে পানি উঠেছে। পানি উঠার সঙ্গে সঙ্গে সাপের আশ্রয়গুলো ডুবে গেছে। ফলে সাপ উঁচু আশ্রয় স্থল হিসেবে মানুষের বাড়িতে উঠছে। আর সাপ বিষাক্ত বিধায় আতংকে পড়ছে মানুষ।
তিনি জানান, পদ্মার চরের মানুষ দুই সপ্তাহ থেকে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে জীবন যাবন করছে। তাদের আশ্রয় স্থল পানিতে ডুবে গেছে। তাদের বাড়িতে খাবার নেই। বর্তমানে কোনো কাজও নেই। তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাবন করছে।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ভাঙ্গনে পদ্মার চরের শত শত পরিবার গৃহহারা হয়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছে। হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি ভাঙছে পাড়।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, বাঘার পদ্মার মধ্যে প্রায় স্থানে পানি উঠেছে। এ কারণে সাপ উঁচু স্থান বেছে নেয়ার চেষ্টা করছে। ফলে সাপের উপদ্রব কিছুটা বেড়েছে। তবে সাপের উপদ্রব এড়াতে চরের লোকজনকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্দশার মধ্যে দুই সপ্তাহ থেকে চরের মানুষ বসবাস করছে। তাদের ত্রাণ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।