ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

‘ভাই আগে মাল দিয়ে কথা বলেন’ বরগুনার এলজিইডি কর্মকর্তা

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, আগস্ট ৩০, ২০২১

‘ভাই আগে মাল দিয়ে কথা বলেন’ বরগুনার এলজিইডি কর্মকর্তা

ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর-এলজিইডি।কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ-বানিজ্যের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে।

 

ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে শতকরা হিসেব করে ঘুষ দিতে হয় ঠিকাদারদের। এখানে টাকা ছাড়া কথা বলেন না কেউ। এবিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডের গুনগত মান যাচাই-বাছাই নিয়েও বর্তমানে চরম সংশয় দেখা দিয়েছে।

 

এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের ফোরম্যান জিয়াউর রহমানকে একটি ভিডিওচিত্রে প্রকাশ্যে বলতে শোনা গেছেআগে ভাই মাল দিয়ে কথা বলেন ওই ভিডিওচিত্রটিতে জিয়াউর রহমানকে দেখা গেছে গুনে গুনে ঘুষের টাকা গ্রহণের পাশাপাশি পুকুর খাল খনন (আইপিসিপি) প্রকল্পের অধীনে দপ্তরের কোন কোন কর্মকর্তাকে কত পার্সেন্ট ঘুষ দিতে হয় তা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছে বুঝিয়ে বলতে। সময় তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের আরও বলেন, প্রকল্প পরিচালক বাবদ ২২ হাজার টাকা, নির্বাহী প্রকৌশলীকে দুই পার্সেন্ট অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা এবং এসও নজরুল ইসলামের জন্যে তিনি ১৩ হাজার টাকা কেটে রেখেছেন। আর সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের জন্যে নির্ধারিত টাকা তাদের হাতে হাতে দিয়ে আসতে বলেন তিনি।

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের আরেকটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, হিসাবরক্ষক মো. হুমায়ুন কবির অফিস কক্ষে ধুমপানরত অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘টাকা দিতে হবে, টাকা না দিলে কোন বিল দেয়া যাবে না। টাকা আমি একা খাইনা। আপনারা টাকা কম দিলে আমি কি আমার পকেটের টাকা দিয়ে স্যারদের দেবো?’

 

বরগুনা সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের একজন উপসহকারী প্রকৌশলীর ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, একটি প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি নিজেই ঠিকাদারদের কাছ থেকে জোর করে ঘুষ আদায় করছেন। অতিসম্প্রতি ঘুষ লেনদেনকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জের ধরে উপসহকারী প্রকৌশলী এবং একজন ঠিকাদার বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে মারামারি ধস্তাধস্তির ভিডিওচিত্রও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে।পরে টাকার বিনিময়ে মিলমিশ হয়েযায়।

 

বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির অধীনে আমতলী তালতলী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩টি লোহার ব্রিজ সংস্কারের জন্যে দরপত্র আহবান করে। ঐদরপত্র অনুযায়ী ব্রিজ নেই এমন কোথাও নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের সুযোগ নেই। অথচ দরপত্রে উল্লিখিত ৩৩টি ব্রিজের মধ্যে একটি ব্রিজের বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

 

চারটি বাশেঁর সাঁকোকে ব্রিজ দেখিয়ে সংস্কারের জন্যে কোটি টাকার ভৌতিক বরাদ্দ দেয় এলজিইিডি। ঘটনায় এলজিইডি বরগুনার অনিয়ম-দুর্নীতি ভৌতিক ব্রিজ নিয়ে গত বছরের আগস্ট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ভৌতিক দরপত্রটি বাতিল করতে বাধ্য হন এলজিইডি কর্তৃৃপক্ষ।

 

ঘুষ ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না বরগুনার এলজিইডি অফিসে, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের।নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর আরেক ভুক্তভোগী ঠিকাদার বলেন, ‘কাজ, ওয়ার্কঅর্ডার, কাজ তদারকি কর্মকর্তা, বিল পাওয়ার আগে হিসাব রক্ষকসহ অফিস সহকারী, উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী এমনকি প্রকল্প পরিচালকসহ জনে জনে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

 

এবিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি অধিনে গঠিত বরগুনা জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. আনিসুুর রহমান বলেন, ‘সকল প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা কমিয়ে আনতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরবচিছন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে টিআইবি।তিনি আরও বলেন, ‘ঘুষ দুর্নীতির এমন চিত্র কোনভাবেই কাম্য নয়।

 

বিষয়ে জানতে বরগুনার আমতলী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবিরের ফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসকে আরিফুল ইসলাম তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের কোন সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না বলে জানান। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতির বিভিন্ন ভিডিওচিত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার দপ্তরের কোন কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী কী বক্তব্য দিয়েছেন তা তাদের নিজস্ব বিষয়। এসব বক্তব্যের দায়দায়িত্বও তাদের।

সুত্র: এফএনএস