ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, জুলাই ৯, ২০২৪ |

EN

‘বদলগাছীর মেম্বাররা সব ফকির’, ইউএনওর বক্তব্যে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, মার্চ ২৩, ২০২২

‘বদলগাছীর মেম্বাররা সব ফকির’, ইউএনওর বক্তব্যে ক্ষোভ
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের সঙ্গে ইউএনওর বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইউপি সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, আজ মঙ্গলবার জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি), ঢাকার আয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সম্পর্কিত অবহিতকরণ (২২ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ) কর্মশালা শুরু হয়েছে। তিন দিনের এই কর্মশালার আটটি ইউনিয়নের নারী-পুরুষ মিলে ৯৬ জন ইউপি সদস্য অংশ নেন। এটি বাস্তবায়ন করছে বদলগাছী উপজেলা প্রশাসন।

প্রথম দিনে সকালে ছোট্ট প্যাকেটে করে ইউপি সদস্যদের হাতে হাতে নাস্তা দেওয়া হয়। কিন্তু পানির বোতল দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ইউপি সদস্যরা পরস্পরের মধ্যে কথা বলেন। পরে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না জানতে ইউপি সদস্যরা একত্রিত হয়ে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিনের কক্ষে বিলাশবাড়ি ইউপি সদস্য হেলাল হোসেনকে প্রতিনিধি করে পাঠান। ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন ইউপি সদস্যদের ‘রাস্তার ফকির’ আখ্যা দিয়ে অপমান করে কক্ষ থেকে বের করে দেন।

ইউপি সদস্যরা বলেন, দুপুরের খাবার বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে তাঁরা সবাই তাঁর অফিসকক্ষের সামনে যান। একজনকে ভেতরে যেতে বলেন ইউএনও। তখন ইউপি সদস্য হেলালকে প্রতিনিধি করে পাঠানো হয়। ইউএনও তাঁর সঙ্গে অশোভণ আচরণ করেন। সব ইউপি সদস্যদের ‘ফকির’ বলে আখ্যায়িত করে ‘কোনও কথা শুনবো না’ বলে চলে যেতে বলেন। এ সময় ইউপি সদস্যদের পাঁচ মাসের বেতন আটকে দেওয়ারও হুমকি দেন।

এ নিয়ে মেম্বারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তাঁরা উপজেলা চত্বরে ইউএনও অফিসের সামনে এ বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। উপস্থিত মেম্বাররা ইউএনওর অশোভন আচরণের প্রতিাবাদ করতে থাকেন।

তাঁদের শান্ত করতে ইউএনও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু, মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন ও কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপনের মাধ্যমে সবাইকে ডেকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের হল রুমে নিয়ে যান। পরে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান সামছুল আলম খাঁন উপস্থিত হন।

ইউএনও হল রুমে পুনরায় এলে ইউপি সদস্যরা সমস্বরে অপমানের প্রতিবাদ জানান। এই কর্মশালা করবেন না বলেও ঘোষণা দেন। ইউএনও তাঁদের বারবার শান্ত করার চেষ্টা করেন।

এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান ইমামুল আল হাসান তিতু ও মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনও মেম্বারদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। 

প্রতিনিধি হয়ে ইউএনওর কক্ষে কথা বলতে যাওয়া ইউপি সদস্য হেলাল হোসেন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমাদের প্রশিক্ষণ হবে। আজকে বেলা ১টা ৫ মিনিটে আমাদের বিরতি দিয়েছে। আমরা ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে কি না। তাঁরা কোনও কথা না বলে চলে গেলে পিয়নেরা বলেন, খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা ৯৬ জন মেম্বার এ সময় কোনও হোটেলে এক সঙ্গে এতো খাবার পাব না। আর সকালে আমাদের নাস্তা দিলেও পানির কোনও ব্যবস্থা ছিল না।’

মেম্বার হেলাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের কাছে জানতে চাইলে ইউএনও স্যার আমার কোনও কথা না শুনেই বলেন, আপনাদের ফকিরের মতো আচরণ। আমি একটি কথা বলতে চাইলে তিনি আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমার ওপর রেগে গিয়ে বলেন, আপনাদের পাঁচ মাসের বেতন আটকানো হবে। আমার কোনও কথাই শোনেনি তিনি।’

এদিকে ইউপি সদস্যরা ঘটনাটি সাংবাদিকদের জানান। সাংবাদিকেরা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন হল রুমে গিয়ে উত্তেজনার ভিডিও ধারণ করলে ইউএনও নিরাপত্ত কর্মী দিয়ে এক সাংবাদিকের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি জব্দ করে নিজেই ভিডিও ডিলিট করে দেন।  নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ‘আপনাদের এখান থেকে চলে যেতে বলেছে। আপনারা চলে যান।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিঠাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমি পরে গিয়েছি, আগের ঘটনা বলতে পারবো না। তবে গিয়ে দেখি মেম্বাররা সবাই ইউএনওর সঙ্গে কি যেন কথা বলে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ইউএনও স্যারসহ মেম্বারদের নিয়ে হলরুমে বসিয়ে ভুল বোঝাবোঝি শেষে সবাইকে পাঁচশ টাকা করে দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান বলেন, ‘ইউপি সদস্যদের কর্মশালায় সকালের নাস্তা দিলেও পানি দেওয়া হয়নি। আবার দুপুরের খাবারের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় মেম্বাররা মন খারাপ করে ইউএনওর কাছে গেলে তিনি নাকি “মেম্বারদের আচরণ ফকিরের মতো” বলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে শুনেছি।’

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, ‘এই ইউএনও যোগদানের পর থেকে সবার সঙ্গে অশোভন আচরণ করে চলেছে। আর এই কর্মশালার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ‘মেম্বাররা আমার রুমে আসার আগেই চিৎকার করছিল। তাদের বুঝিয়েছি এরকম করা ঠিক না। কিছু বলার থাকলে এক/দুই জন এসে সমস্যার কথা বলতে পারতো।’

আপনার সঙ্গে এক মেম্বার দেখা করতে গেলে আপনি তাঁদের আচরণ ফকিরের মতো বলে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন—এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান ইউএনও।