Can't found in the image content. সিন্ডিকেটের কবলে লবন ব্যবসা | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ |

EN

টেকনাফে লবনের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষীরা, চাষে অনীহা

সিন্ডিকেটের কবলে লবন ব্যবসা

আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, মার্চ ২১, ২০২২

সিন্ডিকেটের কবলে লবন ব্যবসা
টেকনাফ উপকূলীয় অঞ্চল লবন উৎপাদনের ভরা মৌসুম। এখন গোটা উপজেলায় পুরোদমে চলছে মাঠে লবন উৎপাদন। মাথার ঘাম পায়ে পেলেও ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না চাষীরা। লবনের দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ চাষী। অনেক চাষীরা চাষে অনাগ্রহ ও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চাষীদের অভিযোগ, লবন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম কমিয়ে দিয়েছে। 

২০ মার্চ রবিবার সরেজমিন লবন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিশাল মাঠ জুড়ে লবনের স্তুপ। লবন শ্রমিকরা  তপ্ত রৌদ্রে মাঠে কাজ করছে। কালো পলিথিনে সারি সারি লবনের প্লট বা বেড। ওই বেডের পলিথিনের উপর সাদা লবনের দানা।

অনেকেই দেশের সাদা সোনা নামে খ্যাত করেছে এই উৎপাদিত লবনকে। মাঠের শ্রমিকরা ওই বেডে খরা লবনের পানি ছিটাচ্ছেন। শ্রমিকের শরীর থেকে ঝরঝর করে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে। এই তপ্ত রৌদ্রকে তোয়াক্কা না করে পুরোদমে কাজ  করছে শ্রমিকরা। এসময় কথা হয় রঙ্গিখালী লবন মাঠের শ্রমিক মো. জুবাইরের সাথে। 

সে জানায়, ছয় মাস অর্থাৎ লবনের সিজন পর্যন্ত ৫৫ হাজার টাকায় দামে এককালীন মজুরী থেকেছেন। সে একজনে এক একর জমির দেখভাল করে লবন উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছেন। নয়াপাড়া লবন মাঠে কাজ করছেন আবদুর রহমান ও মো. সৈয়দ মিয়া। তারা জানান, প্রতি এক মন লবনে ৮০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন।

বর্তমানে লবনের দাম প্রতি মনে ২১০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এর দরের মধ্যে উঠানামা করে লবনের দাম। খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করার ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষীদের।

চাষীদের অভিযোগ, লবন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি উৎপাদিত লবণ কম দামে বিক্রিতে এক প্রকার বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ বাজারে এক কেজি প্যাকেট জাত লবনের মু্ল্য ৩০-৪০ টাকা।

হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের লবন চাষী ও টেকনাফ উপজেলা লবন চাষী কল্যাণ সমিতির যুগ্ন আহবায়ক নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, তিনি এবছর ৪০ একর জমি চাষ করছেন। প্রতি একরের জন্য একজন করে শ্রমিক নিয়োগ রয়েছে। প্রতিজন শ্রমিককে এক মন লবনের পিছনে ৮০ টাকা দরে আদায় করতে হয়। প্রতি এক একরে পাঁচশত মনের অধিক লবন উৎপাদন করা মুশকিল। এক সিজনের জন্য জমির বর্গা প্রতি একর ৩৫-৪০ হাজার, পলিথিন খরচ ৮-১০ হাজার, পানি খরচ ১১-১২ হাজার, গাড়িতে উঠানো ১০-১২ হাজার ও অন্যান্য প্রায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ লাগে। সে হিসেবে  হাজার হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষীদের। বর্তমানের এই অবস্থা চলতে থাকলে মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ নেই। তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 

বিসিক টেকনাফ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, টেকনাফে প্রায় ৩ হাজার ৯'শত একর জমিতে লবন উৎপাদন করা হচ্ছে।

লবন মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরী করে মাঠ পর্যায়ে লবনের দাম কমিয়ে দেওয়ার বিষয় অন্য জনের মতো আমিও শুনেছি। এবিষয়ে মন্ত্রনালয় থেকে কোন নিদর্শনা পাওয়া গেলে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। চাষীরা যাতে ন্যায্য মুল্য পায় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।

এদিক খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবছরও কক্সবাজারের সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ  লবণ উৎপাদন হয়ে আসছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌরসভা, হ্নীলা, হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় লবন চাষ হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে টেকনাফে ৩ হাজার ৯'শত একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। সারা দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।