ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে স্কুল ড্রেস না থাকায় শিক্ষার্থীদের বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: বুধবার, মার্চ ১৬, ২০২২

ফুলবাড়ীতে স্কুল ড্রেস না থাকায় শিক্ষার্থীদের বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস না থাকায় তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

গতকাল মঙ্গলবার পৌর শহরের ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া  সিনহা স্বর্ণা,পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মো.শাহিনুর ইসলামের মেয়ে। সে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী তার বাবা একজন সুপারি ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,মঙ্গলবার সকালে ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল চলাকালিন সময়ে স্কুল ড্রেস না থাকার কারনে,ষষ্ঠ শ্রেনীর দরিদ্র অসুস্থ্য শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম থেকে ডেকে এনে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন,ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী । এসময় শিক্ষার্থীরা  শিক্ষককে অনুরোধ করার পরেও তাদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেননি তিনি।

শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণাসহ অন্যন্য শিক্ষার্থীরা জানান,কিছুদিন থেকে তাদের স্কুল ড্রেস পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসার নির্দেশ দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা,এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের জানালে ড্রেস বানিয়ে দেবেন এমন আশ^াস দেন আভিভাবকরা। এরপর মঙ্গলবার তারা বিদ্যালয়ে এলে স্কুল ড্রেস না থাকার কারনে ক্লাস রুম থেকে ডেকে এনে তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ষষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া  সিনহা স্বর্ণা’র বাবা মো.শাহিনুর ইসলাম দু:খ প্রকাশ করে বলেন,তিনি নিজে তার অসুস্থ্য মেয়েকে বিদ্যালয়ে রেখে সহকারী শিক্ষকদের বলেন, যে তার স্কুল ড্রেস তৈরী করা হয়েছে,দর্জির কাছে রয়েছে, কাল থেকে স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসবে তার মেয়ে। এর কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন যে তার মেয়ে সুমাইয়া কে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে,সে এখন পৌর শহরের ঢাকা মোড় নামক স্থানে রয়েছে। 
তিনি বলেন, তার মেয়ে একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী প্রতিমাসে তাকে তিন থেকে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়, চিকিৎসা খরচসহ প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। এপর্যন্ত তার চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ সম্বল বাড়ীটিও বিক্রি করতে হয়েছে। তিনি বলেন,তাকে স্কুল থেকে বের করে না দিয়ে আমাকে জানাতে পারত,তাকে আমি নিজে বাড়ীতে নিয়ে যেতাম,এভাবে একটা অসুস্থ বাচ্চাকে বের করে দেয়া কতটুকু যুক্তিগত। ব্যাস্ততম সড়কে একাএকা চলাচলের কারনে আমার মেয়ের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী বলেন,নির্দেশনা অনুযায়ী সকল শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পরিধান করে বিদ্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। বারবার বলার পরেও অনেকে স্কুল ড্রেস পরে আসছেন না, তাই তাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্কুল ড্রেস ছাড়া একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি তার কোনো সদউত্তর দিতে পারেনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শমসের আলী মন্ডল জানান,শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস পরিধানের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেয়ার জন্য,তবে এরকম কোনো কথা বলা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন,কিছু আইনসৃঙ্খলার বিষয় থাকে,আবার কিছু বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে,তবে বিষটি নিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।

এবিষয়ে কথা বললে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আতাউর রহমান বলেন,যারা স্কুল ড্রেস কিনতে পারেন না, আমাকে জানালে আমি নিজে তাদের স্কুল ড্রেস কিনে দেই,আমাকে জানালে আমি কিনে দিতাম। তিনি বলেন, এটি একটি দু:খ জনক ব্যাপার,বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিষয়টি তিনি দেখবেন।