ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

বরিশালে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

আল মামুন, বরিশাল প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ২৭, ২০২১

বরিশালে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু

বরিশালে বেসরকারি একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৭ আগষ্ট) সকালে নগরীর নবগ্রাম রোডে অবস্থিত হলি কেয়ার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের চতুর্থ তলার মেঝ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।


চন্দন সরকার (২৫) জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা এলাকার চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে। কোতয়ালি মডেল থানার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


স্বজনদের দাবি, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্যাতনে মৃত্যু হয়নি। সে গলায় গামছা পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে।


ওসি জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের- বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।


নিহতের মামা নিবাস মহুরী বলেন, আমার ভাগনে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসতে চায়নি। সে বলেছিল, এসব কেন্দ্রে অনেক টর্চার করা হয়। আমরা তার কথা শুনিনি। গত আগষ্ট হলি কেয়ার সেন্টারে তাকে রেখে গেছি। তখন কোমরের বেল্টটি পর্যন্ত সাথে রাখতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। রশি বা গামছা তো দূরের কথা। তাহলে হত্যায় গামছা পেল কীভাবে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ভোররাতে হলি কেয়ার থেকে মোবাইলে আমাকে জানানো হয় চন্দন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। আমার ভাগনেকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। এখানে এসে তো লাশও দেখছি না। আত্মহত্যা করলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করবে। কিন্তু এখানে লাশ উদ্ধার পুলিশ করেনি, হলি কেয়ারের লোকজনই বাথরুম থেকে লাশ ফ্লোরে এনে রেখেছে। এটি হত্যাকান্ড। আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।


হলি কেয়ারের ব্যবস্থাপক মাইনুল হক তমাল জানান, কেন্দ্রে মোট ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে একজনএক্সিডেন্টেমারা গেছে। এখন ২৭ জন রয়েছে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বিস্তারিত তারাই বলতে পারবেন।


হলি কেয়ারের চতুর্থ তলার দায়িত্বে থাকা ভলান্টিয়ার সরোয়ার বলেন, রাত সোয়া ৩টার দিকে আমাকে ডেকে তোলা হয়, একজন টয়লেটে আত্মহত্যা করেছে বলে। উঠে দেখি চন্দন সরকার গলায় গামছা পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে নামিয়ে মেঝেতে এনে রাখি।


বাথরুমের উচ্চতায় কেউ আত্মহত্যা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে সরোয়ার বলেন, তা বলতে পারব না, তবে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করেছি।


এদিকে ভর্তি অন্যান্য রোগীরা জানান, ভলান্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সরোয়ার কথায় কথায় রোগীকে মারধর করেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চন্দন সরকারকে বেদম মারধর করা হয়। শেষ রাতে জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন।


অভিযুক্ত সরোয়ার বলেন, রাতে চন্দন সরকার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শুয়ে থাকলে অপর রোগী তারিকুল তা নিষেধ করেন। এতে চন্দন ক্ষিপ্ত হয়ে তারিকুলকে ঘুষি মারেন। সময় চন্দনকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে কয়েকটিথাপ্পড়দিয়েছি। কিন্তু তাকে কোনো নির্যাতন করিনি।


তিনি বলেন, এখানে সকলেই মাদকাসক্ত। তাদের নিয়ন্ত্রন করতে যেটুকু প্রয়োজন তার বাইরে কিছুই করা হতো না।


কোতোয়ালী মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।