দিনদিন হুহু করে বাড়ছে ভোজ্য তেল,এলপিজি গ্যাস,মাংস,পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে সব চেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়লেও, নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসিপত্রের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় একেবারেই বেসামাল সাধারণ মানুষ। দিনদিন ব্যয় বাড়লেও, বাড়েনি আয়। ফলে সংসার চলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক দফা ভোজ্য তেল,আটা ময়দা,ডিম,চিনি,চালসহ এলপি গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নেই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা।
এদিকে রমজানও ঘনিয়ে আসছে,বাজার নিয়ন্ত্রনে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিতে পারলে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন করছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, এখন থেকে পাইকারি বাজারে মনিটরিং না বাড়ালে রমজানে বাজারের লাগাম ধরে রাখা কষ্টকর হবে। পাইকারী বাজারে কদিন আগেও নতুন দেশি পেঁয়াজ ২৮ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকায়,সরু মিনিকেট চাল ৬৩-৬৪ টাকা,নাজিরশাইল ৬৪-৬৫ টাকা,আটাশ চাল ৫৬-৫৭ টাকা,প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬শ টাকা, ছাগলের (খাসির) মাংস ৮শ টাকা, মুরগি ১৫০-২৫০ টাকা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে এলপিজি গ্যাস ১২ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪শ টাকা,জালানী খড়ি ২৬০টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কাঁচা তরি তরকারী মসলাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও আকাশ ছোঁয়া।
শুক্রবার সরেজমিনে পৌর বাজারে গিয়ে,বাজার করতে আসা ফজলু মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান,এক মাস আগেও বাজার থেকে সয়াবিন তেল কিনেছেন ১১০-১২০ টাকা লিটার। এখন তেলের দাম শুনে রীতিমত কপালের ঘাম ঝরছে, লিটার প্রতি সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৮০টাকা। অথ্যাৎ বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকা। শুধু তেল নয়,মশুর ডাল, চাল, চিনি,গ্যাসসহ সবকিছুর দাম এখন নাগালের বাইরে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
রয়েল নামে এক হোটেল শ্রমিক জানান,তিনি একটি হেটেলে চাকরি করেন, প্রতিদিন ৪শ টাকা হাজিরা হিসেবে মাসে বেতন পান ১২ হাজার টাকা। বেতন তো বাড়েনি বরং করোনার মধ্যে কয়েক মাস হোটেল বন্ধ ছিল। করোনায় বসে বসে সংসার চালাতে রিনের বোঝা মাথায় চেপেছে। সংকট কাটতে না কাটতেই নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে তিনি এখন দিশেহারা। শুধু তিনি নয় বর্তমান বাজার দরে ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতে বসেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। মধ্যবিত্তের নিরব কান্না এখন আর চার দেয়ালে বন্দি নেই তারা ছুটছেন টিসিবি পন্যের গাড়ীর পিছনেও । তারা নিরবে বোবা কান্নায় জীবন কাটাচ্ছেন। উপার্জনের সঙ্গে মিল অমিলের হিসেব কষতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভোক্তারা।
শিক্ষক মাহাবুর রহমান বলেন, শুধু নিত্যপণ্য না এর বাইরেও ব্যয় বাড়ছে। বছর ঘুরলেই বাসা ভাড়া বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম-গ্যাসের দাম তো রীতিমতো প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। একের পর এক খরচের লাগাম বাড়ছে বৈকি,কমছে না।
সম্প্রতি ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে,খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মুল্যের চিত্র। এর প্রভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ছিন্নমূল পরিবারের অনেকে বেছে নিচ্ছে চুরি-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ মুলক কার্যকলাপের পথ। সম্প্রতি উপজেলা শহরের ব্যস্ততম এলাকা থেকে দিনেদুপুরে টাকা ছিনতাইসহ বাসা-বাড়িতে চুরি ঘটনাও বেড়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের এই অভাব অনটনকে পুঁজি করে, সরব হয়ে উঠেছে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীরা। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সংসারের ব্যয়ভার মোটাতে ওইসব দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দাদন ব্যবসায়ীরা চড়া সুদ গ্রহণ করছে। সময় মতো পরিশোধ না করতে পারায় সর্বসান্ত হচ্ছেন অনেকে।
সুজাপুর এলাকার নুরল ইসলাম জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগীদের বোবা কান্না দেখার যেন কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে পৌর বাজারের গৌর ষ্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী গৌড় চন্দ্র সরকার বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল-ডাল-তেল-মসলাসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনিয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে ক্ষুব্ধতা দেখা দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রিয়াজ উদ্দিন জানান, বিষয়টি আলোচনা করে,বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে শিঘ্রই বাজার মনিটরিং করা হবে।