“পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুণ মাস”। হ্যাঁ আজ পহেলা ফাগুন। বৈচিত্রময় ষড়ঋতুর এই বাংলার দ্বারে অবগুন্ঠিত ঋতুরাজ বসন্ত’র। বসন্ত বরণে গুন গুন সুরে‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে
কোরো না বিড়ম্বিত তারে।
শীত পেরিয়ে ঋতুরাজ বসন্ত এসে গেছে। আবহমান বাংলার প্রান্তরে প্রান্তরে দিক দিগন্তে আমোদিত প্রফুল আমেজ নিয়ে এসেছে ঋতুরাজ। অশোক-পলাশ-শিমুলের বন সেই আগমনী বার্তা বলছে। শীতের হিমেল পরশে জীর্ণ, বিবর্ণ ধরনী বসন্তের স্পর্শে উন্মত্ত যৌবনা ষোড়শী। দখিনা সমিরণে কোকিলের কুহুতানে মানব মনে মাদকতার ছোঁয়াই প্রাণে দোলা লাগে কিংবা গুণ-গুণ করে গেয়ে উঠে মন ‘আহা আজি এ বসন্তে...এত ফুল ফোটে...এত পাখি গায়’।
আজ পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। আমরা যদিও ইংরেজী বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বেশিরভাগ সব হিসেব করে থাকি। কিন্তু পহেলা বৈশাখ কিংবা পহেলা ফাল্গুন কখোনই ভুলে যাইনা। তাইতো এত আয়োজন।
প্রকৃতি আজ খুলে দেবে দখিন দুয়ার,সাজবে নতুনরূপে। বসন্ত মানে ফুল ফুটবার কাল। গাছে গাছে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠবে রুক্ষ প্রকৃতি। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতই বাঙালির মনেও দোলা লাগবে। একই সঙ্গে বাসন্তি রংয়ের শাড়ি ও পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়ে আনন্দে মেতে উঠবে কচি-কাচা। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে বন-বনানী অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠবে। পলাশ, শিমুল গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা।
বাংলাদেশের ইতিহাসেও ফাল্গুনের আবেদন এবং অবদান কম নয়। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। ৮ ফাল্গুন আমাদের ভাষা আন্দোলনের দিন। ইংরেজি বর্ষ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জনশ্রুত।
তবে আবহমান বাংলায় ঋতু রাজ বসন্ত এলেও বর্তমানে বঙ্গালী কিংবা বাঙ্গালাদেশীসহ গোটা বিশ্ব আজ এক অনুজীবের কাছে যেন পরাস্ত! আর এই অনুজীব হলো করোনা। বৈশ্বিক করোনা আমাদের জীবন থেকে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে। আমরা আমাদের অতি সম্প্রতিই বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন করছি সংক্ষিপ্তসারে। যদিও বর্তমানে এই দূর্যোগ মোকাবেলায় শুরু হয়েছে টিকা প্রদান। টিকা প্রদানের সাথে থাকছে নানা বিধি নিষেধ। তবে কি বাঙ্গালীরা বসন্ত বরণ করবে না? অবশ্যই করবে এবং তা নিজ নিজ সর্তকতা অবলম্বনের মধ্যদিয়েই বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কারণ প্রকৃতিতে বসন্ত আসন্ন আর বাঙ্গালী হলো উৎসব প্রিয় জাতি। তাই সামাজিক দুরত্ব বলি আর নিজের সতর্কতা বলি সব মেনেই আমাদের উৎসব করতে হবে। কারণ উৎসব যেন আমাদের উৎকন্ঠার কারণ না হয়।