ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫ | ১ চৈত্র ১৪৩১

EN

জিয়াকে অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির কাছে চিঠি

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২

জিয়াকে অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপির কাছে চিঠি
তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাঁরা নিবেদিতপ্রাণ, দলের দুর্দিনে যাঁরা ত্যাগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন আজ তাঁরাই নিপাতিত হয়েছেন চরম দুর্দিনে। ক্ষমতাবান, সুবিধাভোগী আর স্বার্থবাজ নেতারা তাঁদের দূরে ঠেলে রেখেছেন। দলীয় কর্মকান্ডেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তাদের মধ্যে কিছু সংক্ষ্যক নেতা এবার ওই হাইব্রিডদের দিকে আঙ্গুল তুলছে। প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় প্রভাবশালী (এমপি) আমির হোসেন আমুর কাছে চিঠি দিয়ে রাজাপুর উপজেলা আ‘লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার খান লিটনের দলিয় পদ থেকে অপসারনের দাবি জানায় ওই চিঠিতে। জিয়ার আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী কার্যকলাপে উপজেলার ত্যাগী নেতাকর্মি সহ মুজিব আদর্শের সৈনিকেরা দিশেহারা।

সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩ টিতেই জাপা লাঙ্গল এর লোকদের মনোনয়ন সুপারিশ করে নৌকা মার্কা এনে চেয়ারম্যান করে ও ৫৪ টি ওয়ার্ডের হাতে গোনা কয়েকটি বাদে ইউনিয়ন,ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ,যুবলীগ এর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের পরাজিত করে, বিএনপি, ছাএদল এর নেতৃবৃন্দকে মেম্বর নির্বাচিত করেছেন যা দলের জন্য মারাত্বক ক্ষতির কারন। জিয়া হায়দার খান লিটন উপজেলাটির বিএনপির নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিয়ে প্রবীন আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নামে মামলা  দিয়ে হয়রানি করাচ্ছেন বলেও ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়।

লিটন ১৯৯৭ সনে রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ ছাএসংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্ধন্ধিতা করে বহিস্কৃত হয়। পরে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে পূনরায় ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (জাতীয় পার্টি) এরশাদ এর দলে যোগ দিয়ে মরহুম জাকারিয়ার পক্ষে প্রধান নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে। ২য় বারও বহিস্কৃত হয়ে আবারও ক্ষমা পায়। বিএনপি, জামাত ও জাপার অর্থায়নে সুপরিকল্পিত ভাবে দলে এসে বর্তমানে নোংড়া রাজনীতির মাধ্যমে ত্যাগী নেতাকর্মিদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিরোধী দলের অবস্থান তৈরির পরিস্থিতি তৈরি করেছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার লিটন খান। তার আত্মীয়-স্বজন দিয়ে নৌকাঠী এলাকায় রাজাকার এর নাতনী নিয়ে একটি অসহায় পরিবারের ঘরবাড়ি লুটকরে তাদের ভিটা বাড়ি দখল করে, যাহা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়ে সমাজে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় এসেছে।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কেন্দ্র বাইপাস মোড় এলাকায় তার আত্মীয় স্বজনের দ্বারা অসহায় লুচি মৃধার পত্রিক ভিটা বাড়ি দখল করেছে যাহা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অবস্থান করায় ভয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা বা অসহায় জনগন কথা না বল্লেও সমস্ত বদনামের ভার দলের হচ্ছে বলে তাদের মতামত।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, লিটন খানের ডাকে দলীয় অনুষ্ঠানে নাম মাত্র ৬/৭ শিষ্য ছাড়া কোন নেতাকর্মী উপস্থিত না হওয়াই শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যকলাপে ছাপ এখন পরিস্কার হতে শুরু করেছে । ৬টি ইউনিয়ন এর ১২জন সভাপতি, সম্পাদক এর মধ্যে ২জন এবং ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটির ৫-৭ জনই মুলকর্মী এ ছাড়া উপজেলার সকল নেতা-কর্মীই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তাই যে কোন সময় বিদ্রোহো চরম আকার ধারন হলে দলের মানক্ষুন্ন হতে পারে বলে দলীয় নেতারা মনে করছেন।

দেখা গেছে, ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলে কোণঠাসা আর ভুঁইফোড় সুবিধাভোগীরা বিপুল দাপটে। অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতায় পরিপুষ্ট আর ত্যাগী বঞ্চিত-নিপীড়িতদের মুখে শুধুই হতাশার সুর। বিভিন্ন কমিটিতে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি-অনিয়মে আকণ্ঠ নিমজ্জিত দেখে নিবেদিতপ্রাণ নেতারা প্রতিবাদ করতেই হচ্ছেন নির্যাতিত। ক্ষোভ-দুঃখে দলীয় কর্মকান্ড থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন তারা। হতাশার ছাপ এখন রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোতেও।

এব্যাপারে সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মো.আবু মুছা সোহাগ জানায়, রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সঙ্গী নেতাকর্মীরা এমন পরিস্থিতির শিকার বলে জানা গেছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি হাইব্রিড বলে খ্যাত এরা ক্ষমতার স্বাদ পুরোপুরি ভোগ করছেন। তাঁদের বেশির ভাগ বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অথচ বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে প্রতিপক্ষের সহিংস আন্দোলনের সময় তাঁদের মুখও দেখা যায়নি এলাকায়। আমি মামলা হামলার স্বীকার হয়েছি,জেলও খেটেছি অনেক বার। আজ টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে কাজ দেওয়া ও নেওয়া সুরুজ ভাই ও লিটন ভাই করছে। কাজ গুলো আবার তাদের আসপাশে থাকা জামাত বিএনপি থেকে আসা লোক জনকে দিয়ে দিচ্ছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো.জাহিদ হোসেন বলেন, রাজাপুরে দলের রাজনীতি এখন হাইব্রিড ও বহুবার বহিঃকৃত নেতারাই জমি দখল ও টেন্ডারনির্ভর। মারকুটে কর্মীবাহিনী লালন করতে না পারায় আমরা দল থেকে নির্বাসিত। ’ তিনি বলেন, ‘তবে আখের গোছানোয় ব্যস্ত কথিত হাইব্রিন নেতাদের অপরাজনীতি একদিন ধ্বংস হবেই। ’

রাজাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.বাপ্পি মৃধা বলেন,আমরা ছাত্রলীগের নেতারা দলিয় বা জাতিয় প্রগ্রামে দাওয়াত পাইনা ও দেওয়া হয়না তার কারণ বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার খান লিটনের সাথে উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদন্ধিতা করেছিলাম। তিনি দলিয় প্রভাব কাটিয়ে জয়ি হয়েছেন। সেই থেকেই আমাদের তিনি দাওয়াত দেয়না।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো.নাসির মৃধা বলেন, ‘নব্য আওয়ামী লীগারদের কাছে, সুবিধাবাদী নেতাদের কাছে আমরা জিম্মি। তাঁরা আত্মীয়করণ করে পুরো দল দখল করে রেখেছেন। বিএনপি-জামায়াতের আমলে হামলা আর মামলার শিকার হয়েছি আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে সুবিধাভোগী নেতার। তবে চেয়ারে বসলে অনেক সময় মাথা ঠিক থাকেনা তাই একটু এদিক সেদিক করতে পারে,আবার অনেক সময় ভুলও হইতে পারে। হাইব্রিড সম্পর্কে তিনি বলেন,বাস্তব সত্য কথা হলো বর্তমান উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া হায়দার খান লিটন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জরিত ছিলো সত্য এটাকে কেউ অস্বিকার রকতে পারবে না। ইউনিয়ন পরিষদের বানিজ্যের বিষয়ে তিনি এই প্রতিবেদক কে বলেন,নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় ১বছর হয়েছে তাই এটা নিয়ে আর বিতর্কে যেতে চাইনা।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি নিবেদিতপ্রাণ নেতা বলে পরিচিত ডেজলিং তালুকদার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, কি আর বলবো গতকাল আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা ও পিংরি সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গির এর বাড়িতে দলবল ও দেশিও অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা জিয়া হায়দার খান লিটনের লোকজন। রাজনীতি এখন ব্যবসা। টেন্ডারবাজির টাকা দিয়ে পদ কেনা যায়। এ জন্য দায়ী কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব। জনগণের কাছে দলের আদর্শ ও সরকারের উন্নয়ন বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরার ভাবনা ক্ষমতাসীন নেতাদের নেই। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কারণে সচেতন লোকজন দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, রাজাপুরের দলীয় রাজনীতি নব্য আওয়ামী লীগারদের দখলে চলে গেছে। তাদের দাপটে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় রাজপথে থাকা ত্যাগী, নির্যাতিত ও কর্মীবান্ধব নেতারা এখন কোণঠাসা। উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতেই এই অবস্থা বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সুযোগসন্ধানীদের তৎপরতার কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজাপুরের তৃণমূল আওয়ামী লীগ। উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের মধ্যে দলীয় আদর্শের ছিটেফোঁটাও নেই। ছলে-বলে-কৌশলে, কখনো মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে, কখনো চাটুকারিতা করে তাঁরা দলীয় পদ-পদবি বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। আবার বিএনপি-জামায়াত থেকে আগত নেতারাই দলে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাই আমার অভিভাবক জননেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু মহাদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো.জিয়া হায়দার খান লিটন বলেন, এ সকল অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। আমি চেস্টা করি আমার অভিভাবক আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি’র নির্দেশে সকল দলিয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোস্যাল মিডিয়ায় তোলপার করা ওটাও যে যার স্থানে যার যা মনে হয়েছে তাই করছেন।