ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪ |

EN

দেরিতে আসার অভিযোগে ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন মাদ্রাসা শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২২

দেরিতে আসার অভিযোগে ছাত্রকে বেধড়ক পেটালেন মাদ্রাসা শিক্ষক
শেরপুরের শ্রীবরদীতে একদিন মাদ্রাসায় না আসা ও পরের দিন একটু দেরিতে আসার কারণে আসিফুল ইসলাম বিজয় (১৫) নামে এক পূর্ণাঙ্গ হাফেজ শিক্ষার্থীকে তিনটি বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন এক মাদ্রাসা শিক্ষক।গতকাল সোমবার দুপুরে শ্রীবরদী উপজেলার খরিয়াকাজীরচর ইউনিয়নের পূর্ব খরিয়া গ্রামের নূর হেরা নূরানী তালিমুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ওই ঘটনা ঘটে।একইদিন রাতেই আসিফুলকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আসিফুল পূর্ব খরিয়া গ্রামের খলিলুর রহমান খোকনের ছেলে এবং ওই মাদ্রাসায় থেকে ৭ বছর পড়ে গত ৩০ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ হাফেজ পাশ করেছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক শেরপুর শহরের উত্তর গৌরীপুর এলাকার মো.আব্দুল্লাহর ছেলে হাফেজ মো.আমানুল্লাহ (১৯)।ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চান আসিফুলের স্বজনসহ মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে অভিযুক্ত ওই শিক্ষক পলাতক আছেন।এলাকায় ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ভিকটিম হাফেজ বিজয় জানিয়েছে, মাঝে মধ্যে তার খেলাধুলা করতে ইচ্ছা করে।তাই ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে আর মাদ্রাসায় আসা হয়নি।রবিবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার ছিল, কিন্ত বাড়িতে বন্ধুদের সাথে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দেরি হয়ে যায়।এই অপরাধে বিজয়কে বেধড়ক পেটানো হয়।বিজয়কে পেটানোর আগে উচ্চস্বরে না পড়ার কারণে মাদ্রাসার অন্তত ১৮ জন শিক্ষার্থীকে গণহারে পেটানা হয়েছে।তারপর মাদ্রাসায় দেরিতে আসার অভিযোগ করে পেটানোর হয় বিজয়কে।প্রথম দুটি বেত ভেঙ্গে গেলে আরেকটি বেত দিয়ে সারা শরীরে পেটানো হয়।বিজয় হুজুরের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছিল হুজুর লাথি দিয়ে ফেলে দেয়
মাদ্রাসা থেকে বিজয়ের বাড়ির দূরুত্ব আধা কিলোমিটার।মার খেয়ে বিজয় বাসায় চলে যায় এবং হুজুরের ভয়ে বিষয়টি অভিভাবকদের বলারও সাহস পায়নি।পেটানোর ওই দৃশ্য দেখে ছিলেন মসজিদের মোয়াজ্জিন।বিকালেই ওই মোয়াজ্জিন ও কয়েকজন ছাত্র বাজারে বিজয়ের বাবার চায়ের দোকানে গিয়ে বিষয়টি জানান। এর পর বিজয়ের সারা শরীরে ক্ষত দেখে শেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা।

ঘটনার দিন মাদ্রাসা প্রধান হাফেজ মওলানা জাহেদুল ইসলাম দাপ্তরিক কাজে শেরপুরে ছিলেন বলে জানা গেছে।

মাদ্রাসা সূত্র জানায় মাস খানেক আগে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আমানুল্লাহ মৌখিক আলোচনার ভিত্তিতে ওই মাদ্রাসায় যোগদান করে। আমানুল্লাহর যোগদান সংক্রান্ত কোন কাগজ জীবনবৃত্তান্ত কিংবা ছবি মাদ্রাসায় নেই।তিনি যোগদান করার পর থেকেই চুন থেকে পান খসলেই শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করতেন।এই বিষয়টি মাদ্রাসা প্রধানকে জানানো হলে মাদ্রাসা প্রধান ওই শিক্ষককে সাবধান করছেন কিন্ত ব্যবস্থা নেননি।

ছাত্রদের মারধরের বিষয়ে মাদ্রাসা প্রধান হাফেজ মওলানা জাহেদুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনার দিন  তিনি মাদ্রাসায় ছিলেন না। বিষয়টি মর্মান্তিক। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়েছেন।

জাহেদুল ইসলামের দাবি, মাদ্রাসায় কমিটি এভাবেই মৌখিক নিয়োগ দিয়ে থাকে।

ওই অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজারা নাজনীন বলেছেন, বিষয়টি মর্মান্তিক ও নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ।মামলা হয়েছে।অভিযুক্তকে ধরতে চেষ্টা চলছে।দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে।আর কারও দায়িত্বে অবহেলা থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।