বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা-ইউএনও'র বাসভবনে হামলার ঘটনায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার রাতে সংগঠনটির জরুরি সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় তারা।
সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেয়া সদস্যরা বলেন, আইনের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বরিশালে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসারের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাসায় ইউএনও'র করোনা আক্রান্ত অসুস্থ বাবা-মা ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই ইউএনও'র সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়।
সেখানে অশোভন স্লোগান দিয়ে মিছিলও করে দুর্বৃত্তরা। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি গোটা জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে সভায় অভিযোগ করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও তাদের সমর্থকদের এমন কাজের জন্য তীব্র নিন্দা জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
ইউএনওর বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজেও দেখা যায় অন্তত ৬০ থেকে ৭০ জনের হামলার দৃশ্য। অভিযোগ উঠেছে, তাদের বেশির ভাগই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি মডেল থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন ইউএনও এবং পুলিশ। এতে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আব্দুল্লাহসহ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৮০ থেকে ৯০ নেতাকর্মীর নামসহ ৪শ' জনকে আসামি করা হয়েছে।
তবে মামলা দুটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। এ সময় নেতাকর্মীর মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান নেতারা।
অপরদিকে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এই অবস্থার মাঝেই বদলি আদেশ এসেছে কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলামের। তাকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
গত বুধবার (১৮ আগস্ট) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি শাহাজাদা মো. আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রে এই আদেশ দেওয়া হয়। আদেশে ২৫ আগস্টের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।
যদিও ইউএনও’র ওই ঘটনা ১৮ আগস্ট রাতে ঘটেছে। আর ওসির বদলি আদেশও হয়েছে ওই তারিখে। যে কারণে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বদলি হয়েছে মনে করা হলেও ঘটনার আগেই বদলির আদেশ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতি আর মেয়রের বিরুদ্ধেই মামলার পরপরই বদলি আদেশের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় এ নিয়ে কানাঘুষা চলছে।
অনেকেই বলছেন, ইউএনও’র বাসায় হামলার ঘটনায় সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষ না নেয়ায় এবং ঘটনার সময় তার অনুসারীদের ওপর লাঠিচার্জ করার কারণেই ওসি নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব ১০ প্লাটুন বিজিবি চেয়েছে জেলা প্রশাসন। সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।