নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে কয়েক বছর ধরে বেড়েছে পাখির আনাগোনা। শীতে পরিযায়ী পাখিই শুধু নয়, বছরের বেশির ভাগ সময়ই দেশি-বিদেশি নানা জাতের পাখির দখলে থাকে পানিপাড়া গ্রামটি।
এক কিলোমিটার দূর থেকেই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। দুই চোখ যেদিকে যায় শুধু পাখি আর পাখি। এ গাছ থেকে ওই গাছে উড়ে বেড়াচ্ছে। পড়ছে লেকের পানিতেও।
পাখির রাজ্যকে ঘিরে পানিপাড়া গ্রামে ৫০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে অরুণিমা রিসোর্ট (ইকোপার্ক)। মানুষের পাশাপাশি এই রিসোর্ট পাখিদেরও অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। গ্রামের বাঁশঝাড়, গাছগাছালির পাশাপাশি রিসোর্টের ব্যালকনি, জানালা, ঘুলঘুলিতে নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে উড়ে বেড়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। এখানকার লেকে বসেছে বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশি পাখির মেলা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং ছায়া সুনিবিড় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ থাকায় এখানে দেশি-বিদেশি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া লেকের চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফলজ, বনজ, ও ঔষধি গাছ। আরও রয়েছে কৃষিভিত্তিক খামার।
কালিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান মো. শামীমুর রহমান বলেন, বছরের ৯ মাসই রিসোর্ট গলফ ক্লাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিচরণ করে থাকে।
পাখিদের কল্যাণে পানিপাড়া গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনা। পাখি দেখতে দূর-দুরন্ত থেকে পানিপাড়া গ্রামে আসছেন দর্শনার্থীরা। একসঙ্গে এত পাখি দেখার সুযোগ পাওয়া বিরল ঘটনা বলে মনে করেন তাঁরা।
দর্শনার্থী লোহাগড়া উপজেলার মো. চঞ্চল মাহামুদ বলেন, গাছে গাছে যেমন ফুল ধরে তেমনি মনে হচ্ছে গাছে গাছে পাখি ধরেছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে। আর এত সুন্দর পরিবেশ দেখে যে কোনো মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মহাজন বাজারে নবগঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে অথবা ফেরির ব্যবস্থা করা গেলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা অরুণিমা রিসোর্টে (ইকোপার্ক) পাখিদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ট্যুরিজমরিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং অরুণিমা রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ ক্লাবের স্বত্বাধিকারী মো. খবির উদ্দীন বলেন, করোনাকালীণ সময়ে অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব চত্বর জনশূন্য হয়ে পড়লেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল জোরদার। কমবেশি অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানে এসেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের পাখির কলতানে। তিনি দাবি করেন এটি বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ পাখির অভয়াশ্রম। নিরাপদ স্থান মনে করে এখানে দেশ-বিদেশের নানা প্রজাতির পাখি অক্টোবর থেকে জুন মাস পর্যন্ত অবস্থান করে থাকে।