ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ইএসডিও'র সংবাদ সম্মেলন তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিভাবে বিদেশী ফুল টিউলিপ চাষ

জাবেদুর রহমান জাবেদ, তেতুলিয়া প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ২৭, ২০২২

ইএসডিও'র সংবাদ সম্মেলন তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিভাবে বিদেশী ফুল টিউলিপ চাষ
তেঁতুলিয়ায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অগার্নাইজেশন (ইএসডিও)র সহযোগিতায় পিকেএসএফের অর্থায়নে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশী টিউলিপ ফুল চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে ইএসডিও'র মহানন্দা কটেজ হলরুমে টিউলিপ ফুল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করণ সভার আয়োজন করেন। 

সভায় সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আইনুল হক জানান, টিউলিপ ফুল সাধারণত শীতপ্রধান দেশ লেদারল্যান্ড, কাশ্মির, সুইজারল্যান্ড, তুরস্কে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এই ফুল চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুল চাষ সহনশীল। দেশের সর্ব উত্তরের হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাকে উক্ত ফুল চাষাবাদের উপযোগী হিসেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ)"র সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অগার্নাইজেশন(ইএসডিও) টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের ভ্যালুচেইন পাইলটিং প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে।  চলতি বছরের ১ লা জানুয়ারি এই প্রকল্পের আওতায় সদর ইউনিয়নের শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের চাষী আট জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর ৪০ শতক জমিতে ৩টি প্লটে ৪০ হাজার বাল্ব প্রধান অতিথি হিসেবে ইএসডিও'র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ- উজ জামান টিউলিপ ফুলের বাল্ব (বীজ) রোপণ উদ্বোধন করেন। 

এই প্রকল্পের আওতায় চাষীরা ৬টি প্রজাতির ১২টি কালারের টিউলিপ চাষাবাদ শুরু করছে। এই ফুলের বাল্ব বা বীজ রোপণের দিন হতে ১৬-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২০-২১ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। ২৫- ৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। ডাটায় কিছু পাতা থাকে। টিউলিপ প্রজাতির মধ্যে অ্যান্ট্রাকটিকা  (হোয়াইট), ডাচ সানরাইস (ইয়েলো), পারপেল প্রিন্স (পারপেল), টাইমলেস (রেড হোয়াইট শেডি), মিল্কসেক (লাইট পিংঙ্ক), বারসেলোনা (ডার্ক পিংঙ্ক) ইত্যাদি নামে রংবেরঙ্গে টিউলিপ ফুলে ভরে উঠেছে বাগান। এছাড়া অ্যাড রেম (অরেঞ্জ), লালিবেলা (রেড). দি ফ্রান্স (রেড), রিপ্লে (অরেঞ্জ), ডেনমার্ক (অরেঞ্জ), স্ট্রং গোল্ডসহ (ইয়েলো) বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ কলিতে ভরে গেছে প্রতিদিনই নতুন নতুন ফুল ফুটছে বাগানগুলোতে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সকল কলি ফুলে পরিণত হবে। ইএসডিও চাষীদেরকে এই ফুল চাষাবাদের জন্য নেদারল্যান্ড থেকে টিউলিপ ফুলের প্রতিটি বাল্ব বা বীজ ৬১ টাকা ৮০ পয়সায় কিনে চাষীদের মাঝে বিতরণ করেছে। বাল্বের পাশাপাশি ইএসডিও চাষীদেরকে প্রকল্প হতে বিনামুল্যে রাসায়নিক স্যার, জৈব সার, খৈল, শেডনেট এবং ফেন্সিংনেট (বেড়ার জাল) দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাষীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফুল চাষাবাদে উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। 

প্রকল্পের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (এপিসি) মোঃ আইনুল হক আরও বলেন, টিউলিপ চাষাবাদে বাল্ব বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট,  রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকা এবং বিক্রি হবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতিটি টিউলিপ ফুল ১শ' টাকা হারে বিক্রি করতে পারলে ৪০ শতক জমি থেকে মাত্র দুই মাসে ৮ লাখ টাকা আয় করবে চাষীরা। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফুল চাষাবাদও করতে পারবেন। চাষীরা তাদের ৪০ শতাংশ জমিতে এবারই প্রথম রাজসিক সৌন্দর্য্যের ফুল টিউলিপ উৎপাদন করে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছেন। উপজেলার এই নারী চাষীরা এবছর পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছেন। 

বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ১শ' টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করেছেন তারা। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুলপ্রেমিদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করেছেন। এতে করে ফুল বিক্রি বাদেও তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারবেন। চাষীদের পরিবারে আয় বাড়ানো ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুল আমদানি নির্ভরতা কমানো, পঞ্চগড় জেলা তথা তেঁতুলিয়া উপজেলা পর্যটন এলাকা হিসেবে উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে উন্নত মানের টিউলিপ ফুল উৎপাদনে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে চাষীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই ইএসডিও'র এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বানিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন করে তাদের উৎপাদিত ফুল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং গ্রীণ হাউজের ব্যবস্থা করে চাষীদের সহযোগিতা করা, ঢাকাসহ সারাদেশে ফুল সরবরাহে কুলিংভ্যান চালুর ব্যবস্থা করা, ফুল বিক্রিতে ঢাকার ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে চাষীদের সমন্বয় করা বা নেগোসিয়েশনের ব্যবস্থা করে উৎপাদিত ফুল বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করছে ইএসডিও। 

পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ভবিষ্যতে এক হাজার চাষীকে বানিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল চাষাবাদ সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা পাবে। এর ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি খাতে যুক্ত হতে পারে টিউলিপ।