মানিকগঞ্জে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে ঠেকাতে তিনদিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন প্রথম স্ত্রী।
গত ১৭ জানুয়ারি হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা উজানপাড়ায় মধ্য রাতে একই গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে রহম আলীর দ্বিতীয় বিয়ের আয়োজন করা হয়। তবে সেখানে হাজির হন প্রথম স্ত্রী ওই গৃহবধূ। পরে বিয়ে পণ্ড হলে ওই দিন রাতেই রহম আলীর বাড়িতে অনশনে বসেন ওই গৃহবধূ। খবর পেয়ে ২০ জানুয়ারি রাতে হরিরামপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
ওই নারীর প্রবাসফেরত স্বামীর নাম রহম আলী দেওয়ান (৫০)। তিনি ঝিটকা উজানপাড়ার প্রয়াত আব্দুল আলী দেওয়ানের ছেলে। তাদের তিন মেয়ে রয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনের বিয়ে হয়েছে, আরেকজন দশম শ্রেণির ছাত্রী।
রহম আলী দেওয়ান ইতিমধ্যে ওই নারীকে দুই দফা তালাকের নোটিস পাঠিয়েছেন বলে এই নারী ও স্থানীয়রা জানান।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২০ এপ্রিল পারিবারিক কোলহের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দেন রহম আলী দেওয়ান। আইনগতভাবে তালাকটি সম্পন্ন না হওয়ায় গত বছরের ৬ মে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালাক নোটিশ পাঠান স্বামী রহম আলী। কিন্তু তালাক নোটিশটি গ্রহণ না করে ওই গৃহবধূ এলাকার লোকজনকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য অবহিত করেন। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে উভয়পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।
এ ব্যাপারে ওই গৃহবধূ বলেন, আমার স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার দুই মেয়ের জামাইদের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি; যা আমার স্বামীকে তখনও জানাইনি। এছাড়া কয়েক বছরে আমার মেয়েদের উচ্চাভিলাসী চাহিদা পূরণেও অনেক টাকা খরচ হয়। এ জন্যই টাকা পয়সার হিসাব নিয়ে আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি শুরু হতে থাকে।
তিনি বলেন, আর্থিক বিষয় দেখিয়ে একতরফাভাবে আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। এলাকার কয়েকজন মাতবর বিষয়টি সমাধানে গড়িমসি করছেন। মূলত তাদের কারণেই আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এখন তারা আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করাতে চান। আমি যাওয়ার পরে বিয়ে বন্ধ করে আমার স্বামীকে ফেলে তার অন্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
একই বাড়িতে বসবাসকারী রহম আলীর আপন চাচাতো বড় ভাই হারেজ দেওয়ানের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, মেয়েদের ভোগবিলাসিতার জন্যই আমার জা বেহিসাবি খরচ করেছেন। এটাকে কেন্দ্র করে এবং সমাজের কিছু কুচক্রী মানুষের কারণে তিনি সংসার ছাড়া।
এ বিষয়ে সমাজের মাতব্বর জাফর আলী জানান, ৩১ জানুয়ারি শিবালয় উপজেলায় ইউপি নির্বাচন। নির্বাচনের দুএকদিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রহম আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে রহম আলী দেওয়ানের ছোট মেয়ে বলেন, আমার মা বাবার জমি লিখে নিয়েছেন। বাবার সঙ্গে আমরা আছি।
হরিরামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যান। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।