চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার জয়রামপুরে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাটে বেচাকেনা জমে উঠেছে। ভালো দাম পেয়ে গাছিরাও বেশ খুশি। প্রায় একশ’ বছরের পুরোনো ইহাটটি বসে উপজেলার জয়রামপুর রেলস্টেশনের পাশে। সপ্তাহে দু’দিন শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। প্রতি বছর শীত মরসুমের শুরু থেকে শেষ অবধি খেজুর গুড়ের ব্যাপক কেনাবেচা হয়ে থাকে এখানে। এলাকার গাছিরা ভোর হতেই বিভিন্ন পরিবহন যোগে বিক্রির জন্য হাটে গুড় নিয়ে আসেন।
সকাল থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। দুপুর ১২টার মধ্যেই গুড় কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। ওজনে, বিনা ওজনে গাছিদের সাথে দরদাম করে কিনে থাকেন ব্যাপারীরা। দূর-দূরান্ত হতে আসা গুড়ের ব্যাপারীরা দরদাম করে নগদ টাকায় গুড় কিনে নিয়ে যান। চলতি মরসুমে গুড়ের দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকায় গাছিরা একটু বেশিই খুশি। এ বছর এই হাটে ১০০ থেকে ১২০টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হচ্ছে। গুড় কেনা শেষ হলে ট্রাক ভর্তি করে ব্যাপারীরা গুড় নিয়ে চলে যান। প্রতি হাটে ৫ থেকে ৬ ট্রাক গুড় এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা ও নাটোর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারী ও পাইকাররা আসেন গুড় কিনতে।
রাজবাড়ীর ব্যাপারী সিরাজুল ইসলাম বাসসকে জানান, বাবার সাথে ৪০ বছর আগে থেকে এ হাটে গুড় কিনতে আসি। আজও কিনে যাচ্ছি। এখানকার গুড়ের বেশ সুনাম আছে। তাই লাভও দু পয়সা বেশি হয়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচির ব্যাপারী আবুল হালিম জানান, ৩৫ বছর থেকে এই হাটে গুড়ের ব্যবসা করছি। প্রতি হাটে ১০০ থেকে দেড়শ ভাঁড় গুড় কিনে থাকি। তার মতো অসংখ্য ব্যাপারী নিয়মিত গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবুল হালিম জানান, হাটের আশপাশ এলাকার অনেকেই ব্যাপারীদের গুড় কেনার সহযোগিতা করে থাকেন। ফলে তারাও হাট থেকে ইনকাম করছেন।
দামুড়হুদা উপজেলার তারিনীপুর গ্রামের সাব্বির আহম্মেদেও সাথে হাটের দিন কথা হয়। তিনি বাসসকে জানান, ৬ ভাঁড় গুড় এনেছিলাম ভালো দামে বিক্রি করেছি। দামুড়হুদার চিৎলা গ্রামের শফিকুল বাসসকে জানান, ১০ বছর থেকে এ হাটে গুড় বিক্রি করতে আসি। গুড় বিক্রি নিয়ে কোনো প্রকার ভোগান্তি হয় না। গুড় হাটে আনার সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়।
হাটের ইজারাদার আয়ুব আলী স্বপন জানান, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা হাটে গুড় কিনতে আসেন। তাদের নিরাপদে গুড় কেনাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়। ক্রেতা বিক্রেতাদের সকল সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। পাশাপাশি কেউ যাতে হাটে ভেজাল গুড় বিক্রি না করতে পারে সেদিকেও আমরা নজর রাখি। আমরা আশা করি আগামীতে আরও বেশি ক্রেতা-বিক্রেতা এ হাটে গুড় কেনাবেচা করতে আসবেন।
স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান হিরো বাসসকে জানান, শতবর্ষের পুরোনো এ হাট। এক সময়ে এ হাট থেকে গুড় ও সবজি কিনে ট্রেনযোগে নিয়ে যেতেন ব্যবসায়ী ও ফঁড়েরা। এখন বিভিন্ন পরিবহনযোগে ব্যবসায়ীরা গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা দেখে আমাদের ভালো লাগে। আমি এলাকার গুড় উৎপাদনকারীদের প্রতি আহ্বান জানাবো, আমাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ভেজালমুক্ত গুড় হাটে নিয়ে আসবো। তা না হলে একবার বদনাম হয়ে গেলে আম-ছালা সবই যাবে।