Can't found in the image content. গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে মাদক উদ্ধার! | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে মাদক উদ্ধার!

নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বুধবার, জানুয়ারী ৫, ২০২২

গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে মাদক উদ্ধার!
গাজীপুরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাধনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মাদকাসক্ত।

মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে চলতো রোগীদের উপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেয়া হতো লাখ লাখ টাকা।

কোন রোগী তাদের অভিভাবকদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করলে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যেত। ওই কেন্দ্র থেকে মালিক ও কর্মচারীসহ ৫ জনকে আটক এবং কেন্দ্রটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজীপুর জেলা শহরের পূর্ব ভুরুলিয়া কালাসিকদারের ঘাট এলাকায় ‘ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র’ এ র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

অভিযান শেষে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ওই কেন্দ্রের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি বলেন, যেভাবে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা, চিকিৎসা দেওয়া ও রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা তা এখানে দেওয়া হতো না। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হতো বলে কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাধনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ভর্তি রোগীরা।

তিনি আরো জানান, এখান থেকে শারীরিক নির্যাতনের ফুট প্রিন্ট পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রোগীদের ঝুঁলিয়ে পিটানো এবং শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ হিসেবে রশি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাদক নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন আছে তার অধিকাংশই এখানে মানা হতো না। এ কেন্দ্রে নিন্মমানের খাবার সরবরাহসহ ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য কোন চিকিৎসক ছিল না। এ কেন্দ্রে যে পরিমাণ রোগী থাকার কথা তার চেয়ে বেশী রোগী ছিল। ২০০৯ সালে কেন্দ্রটি অনুমোদনহীনভাবে শুরু করলেও পরে তার অনুমোদন নেওয়া হয়। পরে মালিক নিয়ম-কানুন না মেনে কেন্দ্রটি পরিচালনা করতে থাকেন।

তিনি বলেন, এ কেন্দ্র চিকিৎসার নামে জোরপূর্বক রোগীদের আটকিয়ে রাখা হতো। রোগীরা কোন প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নির্যাতন করতো মালিকের কর্মচারিরা। এরকম ৫-৭ জন রোগী পাওয়া গেছে যাদের উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এক রোগীর মা জানান, তার ছেলেকে দুইমাস ১০ দিন আগে এ নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন। প্রতিমাসে ১০ হাজার করে টাকা দিতেন। দেখা করতে এলে নানা অজুহাতে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। মাঝে মঝে দেখা করার সুযোগ পেলেও কেন্দ্রের লোকজনের পাহাড়ায় ছেলের সাথে কথা বলতে হতো।

সর্বশেষ গত শুক্রবার তিনি ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন। তখন ছেলে তার পায়ে ধরে কান্নকাটি করেছিল তাকে বাসায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। তখন তিনি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আজ খবর পেয়ে এখানে আসেন। পরে ছেলের কাছ থেকে জানতে পারেন তাকে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের কথা আগে বলেনি কেন জিজ্ঞাসা করলে ছেলে বলে, তোমার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেছি তারপরও তুমি বুঝতে পারনি। এ সময় ওই মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওই কেন্দ্রে থাকা ২৮ জন রোগীকে মঙ্গলবার বিকালে তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় গাজীপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।