আজমেরি হক বাঁধন। এই অভিনেত্রীর এখন বলার মতো অনেক গল্প কিংবা তাকে নিয়েই এখন অনেক গল্প। গল্পের বাইরে আবার উপস্থিত হয় নানা গসিপও। তার সাফল্যের পেছনে রয়েছে হাসি, কান্না, আনন্দ-বেদনা। যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র বিষয়ক সাময়িকী ‘ভ্যারাইটি’র তালিকায় স্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই অভিনেত্রী।
ভ্যারাইটির তালিকায় বাঁধন ছাড়াও ‘দ্য হোয়াইট টাইগার’ খ্যাত ভারতীয় অভিনেতা আদর্শক গৌরব, কোরিয়ান তারকা ডন লি, ইতালির ওনডিনা কাদেরির মতো জনপ্রিয় তারকা আছেন।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোচিত বাঁধন। গেল বুধবার প্রকাশিত ভ্যারাইটির বছরের আলোচিত তারকার তালিকায় বাঁধনকে রেখে তার প্রশংসা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বাঁধন গণমাধ্যমকে বলেন, 'এটা ভীষণ ভালো লাগার ব্যাপার, আমি ভীষণ আশ্চর্য হয়েছি। আমি বুঝতে পারিনি, এ রকম কিছু ঘটবে। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি- এটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের। হয়তো নামটা আমার আছে কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই ঘটিয়েছেন সাদ। আমাকে বিশ্বাস করার জন্য ডিরেক্টর ও টিমের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।'
নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ নির্মিত এ চলচ্চিত্রে বাঁধন ছাড়াও আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে অভিনয় করেছেন।
প্রসঙ্গত, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের আঘাতে আঘাতে শক্ত হয়েছেন বাঁধন। তিনি হয়ে উঠেছেন প্রতিবাদী নারী। তবে তার জীবন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পুরুষেরও অবদান রয়েছে বলে নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন এই অভিনেত্রী।
বাঁধনের ভাষ্য, 'পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ উভয়ই যে মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণও আছে আমাদের আশপাশে। সেখানে কিন্তু কেনো সমস্যা নেই। আমি সব সময় বলে এসেছি, আমার জীবন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে সমাজের অনেক পুরুষের ভূমিকা বেশি। সেই জায়গা থেকে যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বেড়ে ওঠা পুরুষদের কথা বলেছি, সে জায়গায় থেকে তারা যদি ব্যক্তিগতভাবে আহত হয়ে থাকেন, সেখানে আমার কিছু করার নেই।'
তিনি বলেন, 'আমার আগের সেই সংগ্রাম বহুগুণ বেড়েছে এখন। আমি আগের মতো ভেঙেপড়া দূর্বল বাঁধনটি আর নেই। যে আমাকে খুব সহজেই দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দেওয়া যাবে। আমার বাচ্চার কেসটা এখনও কোর্টে চলছে। কিছুদিন পূর্বে কেসের একটা রায় হয়েছে। সে রায়টা নিয়ে আমি বলবো। এখনও আমার আগে সামাজিক যে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটাও আছে। আমার আশপাশের যে মানুষগুলো যে রকম ছিলেন যেভাবে যেভাবে আমাকে ট্রমাটাইজ করেছেন, হিমিলিয়েট করেছেন তারা এখনও তাদের জায়গা একেবারে অনড় আছেন। কেউ কেউ রূপ চেঞ্চ করেছেন। তারা এখন ভালো বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তার তার অবস্থানে আছেন। পরিবর্তন হয়েছে শুধু আমার ভেতরে। আমি এসব আর এখন গায়ে লাগাই না।'
সাক্ষাৎকারে বাঁধন তার ব্যক্তিগত জীবন প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, 'আমি আর আমার মেয়ে ভালো আছি। আর আপনি তো জানেন যে আমার বাবা-মায়ের বাসায় থাকি আমি। আমার বাবা-মা দুজনেই ভালো আছেন। এইতো এভাবেই চলছে। এখন আসলে নিজেকে ফোকাস করছি। নিজেকে ভালোবাসার চেষ্টা করছি। নিজের ব্যাপারে যত্ন নেওয়ারও চেষ্টা করছি। এটাই এখন বেশি কাজে দিচ্ছে। নিজেকে সময় দিতে চাচ্ছি। এইতো জীবন।'