হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর থানার এসআই নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র জিকে গউছকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী।
ওই ঘটনায় আটক ১০ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে ওসি জানান। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। অনেকেই ইতোমধ্যে শহর ছাড়া হয়েছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে তারা বাড়িঘর ছেড়েছেন- এমন দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা মারও খেলাম, এখন পালিয়েও থাকতে হচ্ছে। কেউ ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। পুলিশ নেতাকর্মীদের খুঁজছে। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য নেতাকর্মীরা যখন জড়ো হচ্ছিলেন তখন শহরের প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ বাধা দেয়। সংঘর্ষ হয়। ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমানের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ রাজিব আহমেদ রিংগনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি জানান, কাউকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে না। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকারও হবে না। তাদের ভয়েরও কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, তবে যারা জনগণের জানমালের ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর থানার ওসি মো. মাসুক আলী আরও জানান, বুধবারের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে মোট ১ হাজার ২শ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৯০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মামলায় জি কে গউছকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক সেলিমকেও আসামি করা হয়। মামলায় বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীদেরও আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য করানোর দাবিতে বুধবার হবিগঞ্জে সমাবেশ আহ্বান করে জেলা বিএনপি। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহরের শায়েস্তানগরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
এতে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, ড. এনাম আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমেদ শ্যামল।
বুধবার দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু পৌনে ২টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় শায়েস্তানগর পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হন। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে শায়েস্তানগর থেকে সার্কিট হাউস রোড পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।