ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

ঘূর্ণিঝড় রেমাল'র তান্ডবে নলছিটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মিলন কান্তি দাস, নলছিটি প্রতিনিধি | আপডেট: মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমাল'র তান্ডবে নলছিটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
নলছিটিতে ঘূর্ণিঝড় রেমাল'র তান্ডবে বিদ্যুত,  রাস্তা,পুল,মাছের ঘের,পানের বরজ,গাছপালা ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

২৭ মে সোমবার দিনভর চলে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি। এতে উপজেলার অধিকাংশ এলাকাই হয়ে পড়েছে পানিবন্দী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও বসত বাড়িতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে মালামাল এবং মূল্যবান আসবাবপত্র। 

সোমবার সকালে দমকা হাওয়ায় চাম্বল গাছ উপড়ে পরে দেলোয়ার কাজী নামে একজনের ঘর ভেঙে যায়। এসময় ঘরে দেলোয়ার কাজী ও তার পরিবারের লোকজন ছিল। 

২৬মে রবিবার দুপুর থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাস বইতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে দমকা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির চাপ ঝড়ে রুপ নেয়। প্রচন্ড দমকা ঝড়ো হাওয়য়  গাছপালা উপড়ে পরে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এব বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে উপজেলা জুড়ে বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে যায়। অপরদিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর। রাজিব চৌধুরী নামের এক ঘের ব্যবসায়ী জানান, তার মাছের ঘের তলিয়ে প্রায় বিয় লাখ টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। এরকম আরও অনেকই তাদের ঘের তলিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে বলে জানান। ২৭মে সোমবার সকালে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে পৌর শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মানুষের বসতঘর হাটু সমান পানি উঠে নষ্ট হয়েছে ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র। পৌর এলাকার শেফালি বেগমজানান,২৭ মে সকালে উঠে দেখি ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে খাটের কাছাকাছি চলে আসছে তখন উপায় না পেয়ে ঘড়ে যা ছিল খাটের উপরে উঠাইছি। তিনি আরও বলেন সারারাত শাপ ও  জোঁকের ভয়ে ছিলাম পানির সাথে অনেক জোক ছিল। অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র বা পাশ্ববর্তী প্রতিবেশীর পাকা ঘরে আশ্রয় নিয়েছে।

নলছিটির সুগন্দা নদী তীরের উপজেলার  স্টেশন রোড চার ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। ফলে ওই সড়কের পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। শেষ রাতের ও বিকেলে ওঠা জোয়ারের পানি উঠে তাদের লাখলাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। 

ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, খুব ভোরে একজন ফোন দিয়ে জানায় যে দোকান পানি উঠেছে। এসে দেখি দোকানের ভিতর তিন চার ফুট পানি। এতে দোকানে থাকা ব্রয়লার মুরগির খাবারের বস্তা, চালের বস্তা,চিনির বস্তা ও মশলা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।  সামনে কুরবানির বাজার তাই মালের পরিমান বেশি ছিল। তিনি আরও বলেন আমার প্রায় ৫/৬ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। 

একই সড়কে অবস্থিত জলিল স্টোরের স্বত্বাধিকারীরা জানান,এই সড়কে বেশিরভাগ দোকানেই পাইকারি মালামাল বিক্রি করা হয়। সামনে কুরবানির বাজার তাই সব দোকানেই প্রচুর পরিমানে মালামাল ছিল। আমার চাল,চিনি,আটার অনেক গুলো বস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে এতে আমার প্রায় ৪/৫লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে একই সড়কে অবস্থিত মেসার্স হাজি এ রহমান  ট্রেডার্সের টিএসপি ও ইউরিয়া সারের বস্তা। স্বত্বাধিকারীরা হাজী এ রহমান জানিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের ১০০ বস্তা সার ও কীটনাশক পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু পাইকারি ও খুচড়া দোকানে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে তাদের মালমাল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

চাল ব্যবসায়ী শাহাদৎ ফকির জানান,আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চালের গোডাউন তলিয়ে প্রায় দুইশত বস্তা চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা আমার জন্য একটা বিরাট ক্ষতি।

পৌরসভাসহ উপজেলার দশটি ইউনিয়নেই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরাপদ করতে বিভিন্ন দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।

নলছিটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ওজোপাডিকোর ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা জানিয়েছেন,ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে আগেই সর্তকতামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। রেমালের কারণে ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ এর খুটি ভেঙে গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গাছ পরে বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে গেছে। আমাদের লোকজন কাজ শুরু করে দিয়েছে। কত ঘন্টা পরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। আপাতত বিভিন্ন সড়কের গাছ সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগ ক্ষতি নিরুপনের কাজ করে যাচ্ছে।